সর্বশেষ

গিয়াসুদ্দিন তাহেরীর গান এবং মাজারপূজারী বনাম শায়েখপূজারী বিতর্ক

পীর, খাজা বা সূফিবাদী মুফতি তাহেরীদের 'মাজার পূজারি' বলে যে 'শায়খপূজারি' ওহাবীরা তাদের রুখে দেন। 

'ইয়া নবী সালামু আলাইকা' শুনলে যাদের গাত্রদাহ হয় সেই নজদির প্রেতাত্মা, সেই এজিদের এ যুগের রূপদের মাথাচাড়া দিতে দেবেন না।

এদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া যাবেনা। সৌদি আরব থেকে শত শত সাহাবী (রা) এর কবরকে এই ধরনের ওহাবী বেয়াদব উগ্রপন্থীরা ভেঙে ফেলেছিল! 

এখন বাংলার দিকে নজর দিয়েছে ওরা। কারণ, বাংলাদেশে কোটি কোটি রাসূল (স) প্রেমীদের কাছে একবার যদি 'আয়াত ব্যবসায়ী' মুন্সিদের মুখোশ খুলে যায় তবে ফতোয়ার মাধ্যমে কট্টরপন্থার সমস্ত—কালেকশনসহ— ব্যবসা শেষ! 

এমন কি এই রূঢ় খারেজিরা মুহাম্মদ (স) এর রওজার ওপর উঠেও বেয়াদবি করেছিল বলে ঐতিহাসিক বর্ণনা রয়েছে। 

একটি জিনিস আমাদের সবার মাথায় রাখতে হবে। 

তা হচ্ছে, এই উপমহাদেশে—বিশেষ করে বঙ্গে মানে আমাদের বাংলাদেশসহ বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে— ইসলাম প্রচার হয় এই পীর বা সূফিদের মাধ্যমে। পীর-মুরিদ, খাজা বাবা আর মুর্শিদদের দরবার বা খানকা ছিল সমস্ত নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের আশ্রয়স্থল। অধিকাংশ কওমী আলেম এখনো বলেন, হক্কানী পীরের সান্নিধ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের ধর্মীয় কাজের ভেতর।

বাবা শাহজালাল থেকে শাহ মাখদুম, শাহ পরাণ থেকে আমানত সবাই তো এই সূফি ধাঁচের আল্লাহর রাসূল (স) এর প্রেমিক। আজকের দিনেও মাজারে অধিকাংশ সাধারণ মানুষই যায়। তাতে কিছুটা ব্যক্তিস্বার্থও কোথাও কোথাও থাকে, কিন্তু সেই স্বার্থ তো অন্য কারো জন্য ক্ষতিকর নয়! এর চেয়ে বড় স্বার্থ তো বড় ছোট মাদ্রাসায়ও আছে, নাই?

সাধারণে পীরের কবর যিয়ারতে গেলে 'পূজা' যারা বানায় তারা তো, সেই বড় মিয়ারা তো যায়—তাদেরই ভাষায়—শায়খ তথা রাবাইপূজা করতে।

আজকের ঘোমটাওয়ালা জাকারিয়া, এই মাদানি সেই খারেজি ফারেগদের কোনো অস্তিত্ব ছিলো হিংস্র গোয়ার গোবিন্দের সামনে? এদের হুঙ্কার আর চেঁচামেচি শুনলে দুনিয়ার কেউ ইসলাম যে শান্তির ধর্ম এটি সহজে বিশ্বাস করবে? আদতে এরা ইসলাম নয়। এরা পেটপূজারি এজিদি দরবারি জাহেল তেলদাস! এদের প্রত্যেকের আইডিওলজি ও 'এজিদ মঞ্জিল' রিয়াদ থেকে নিয়ন্ত্রিত!

ইসলাম মানে শান্তি—সৌহার্দ্য, অপরের কল্যাণ, পরের মতের প্রতি শ্রদ্ধা ইত্যাদি। 

তাহেরি গান গাইছেন 'আল্লাহর ধন রাসূল(স) রে দিয়া/ আল্লাহ গেছেন গায়েব হইয়া'—এতে অন্যায়টা কী? 

রাসূল (স) কে তো সবার আগেই তৈরি করছেন আল্লাহ নিজের নূর থেকে। সেই নূরেই এই জগৎ সংসার তৈরী। তাঁকে নবুওয়াতি দেওয়া তো ধনই দেওয়া, তাঁকে যে জান্নাত-জাহান্নাম দেখিয়েছেন আল্লাহ তা তো ধনই৷ 

অন্যদিকে, আল্লাহ নিজে তো গায়েবই! নূরের তৈরি বলেই তো জিব্রাইল (আ) এক জায়গায় গিয়ে থেমে গেছেন—কী হইছিল আলাপ আল্লাহ আর তাঁর হাবিবের সাক্ষাতে তাঁর পূর্ণাঙ্গ ট্রান্সক্রিপ্ট পাইছি আমরা? 
তাই কেউ যদি 'রাসূল (স) নূরের তৈরি' এটি বিশ্বাস করে তাতে সমস্যা কী?

মহানবী (স) কে বলা হয় নূরমোহাম্মদ (স)। হাজার বছর ধরে এটাই আমাদের বিশ্বাস ছিল, খারেজিরা তাঁরে তাদের শায়খদের মত মাটির লোক বানাতে চায়!

ওহাবী খারেজিদের আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) এর প্রতি বিদ্বেষটা এতো গভীরে যে এরা 'ইয়া নবী সালামু আলাইকা' তে 'তুমি যে নূরের ছবি' আছে বলে এটাই সমাজ থেকে প্রায় উঠিয়ে দিয়েছে। 

এই 'নূরনবী', 'মওলা আলী', 'ইমাম হোসেন', 'মা ফাতেমা', 'নবীপাক' ইত্যাদি শব্দগুলো শুনলেই ওহাবীদের মাথা ঠিক থাকেনা। তাদের প্রতিহত করতে হবে এ কারণে।

এই ওহাবীদের একটি অংশই সন্ত্রাসী আইএস হয়! আল কায়েদা ও জেএমবিসহ হাবিজাবি খারেজি হয়! তারপর তাদের কাফের কারখানা থেকে মানুষকে পাইকারি হারে জবাই করতে ফতোয়া দেয়—মতের ভিন্নতার কারণে অপরকে ডিহিউম্যানাইজ করে তার রক্তপাত জায়েজ করে। 

এই ধরনের জালেমরাই আমাদের বিখ্যাত আল্লাহ ও রাসূল (স) প্রেমিক নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হ ত্যা করে! আমাদের প্রিয় গিয়াসুদ্দিন তাহেরির দিকেও এই শকুনদের কুনজর যেন না পড়ে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে৷ 

তাহেরি সুরে সুরে আল্লাহর শানে হামদ আর রাসূলের প্রেমে নাত গায়! তাতে তো শরিয়ত কোনো বাঁধা দেয় না। 

পবিত্র কোরান আল্লাহর রাসূল (স) সুর করে তেলাওয়াত করতে উৎসাহ দিয়েছেন, বেলালের আযান সুর! রাসূল (স) কে মক্কার কট্টরপন্থী মুশরিকরা মেরে ফেলতে চাইলে তিনি মদিনায় হিজরত করেন এবং মদিনার সবাই রাসূল (স) কে পেয়ে একসাথে গেয়ে ওঠেন 'তালায়াল বাদরু আলাইনা'! 

সম্পূর্ণ যবূর কিতাব আসলে মরমী সঙ্গীত! সুরের অপরিসীম শক্তি আছে বলেই তেলাওয়াত এতো মধুর লাগে! তো তাহেরি সুরে সুরে ভালো কথার গান গাইলে সমস্যা কী?

ব্যাটা, খারেজি ফতোয়াবাজরা যে ওয়াজ করে জীবীকা নির্বাহ করে সেটাও তো গানেরই সুরে! আর এই ওয়াজের চেয়ে বড় বিদায়াত আছে?—তাও পয়সা নিয়ে ওয়াজ করে, পয়সার বিনিময়ে নামাজ পড়ায়, কোরান পড়িয়ে টাকা নেয় যা আল্লাহ স্পষ্ট কোরানে নিষেধ করেছেন!

আর সমাজে যত হারামখোর আছে, যত বড় বড় দুর্নীতিবাজ-বাটপার আছে এদেরই অনুদানের মাধ্যমে খারেজিদের যত ফুটানি। হারাম টাকা দান নেওয়া যাবেনা—এই কথা বলে? হারাম খেয়ে যতই চিল্লাক আর দোয়া করুক ও জিনিস যে কবুল হয়না—এই কথাও জোরেসোরে এরা বলেনা! যত সামষ্টিক স্বার্থে অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাকেই প্রাইমিং করে সামনে আনে, কাজের কথা বলেনা আমাদের মুন্সিপুরুতরা!

যত দোষ খালি কেউ গেয়ে গেয়ে আল্লাহলে স্মরণ করলে, রাসূলের শান বর্ণনা করলে আর রাসূলের প্রেমিক খাজাবাবাদের ভালোবাসলে! তাই তো? 

মূসা ( আ) আর খিজিরের (আ) তরিকা তো এক নয়, উমর (রা) আর ওয়াইজ কুরানি (রা) এর আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার পদ্ধতি তো এক নয়। 

আল্লাহর বানানো স্বাভাবিক নিয়ম না মেনে, কেনো জোর করে এক করতে চায় তবে কট্টরপন্থীরা? খিজিরের ঘটনা কী কারণে আল্লাহ কোরানে বর্ণনা করলেন সেটি নিয়ে ভেবেছে কি আমাদের বিদাত আর কাফের কারখানার উদ্যোক্তাবর্গ?

কিছু হাদিস ওহাবী-খারেজিরা আপনাদের সামনে প্রকাশ করেনা। তার একটি হচ্ছে রাসূল (স) বলেছেন: শেষ যামানায় আসমান ও জমিনের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হবে এক শ্রেণির লোক যারা নিজেদের 'আলেম' পরিচয় দেবে।

এখন গাজায় গণ হ ত্যার সমর্থক ইহু দি রাবাই ও খ্রিস্টান পাদ্রী, গুজরাটে-কাশ্মীরে মুসলিম নিধনের পার্টনার হিন্দুত্ববাদী পুরুত, রোহিঙ্গা গণহ ত্যার সহযোগী বৌদ্ধভীক্ষু আর সৌদি আরব-মিশরসহ বিশ্বের সমস্ত ফেরাউনদের অপকর্মের সমর্থক আমাদের মোল্লা গ্রান্ড ফতোয়াবাজদের এক জায়গায় আনেন—এই হাদিস খাপেখাপে মিলে যাবে!

মজলুমের জন্য এদের কোনো হাহাকার নাই! পৃথিবীর ক্ষমতাবাণদের সঙ্গে এদের অধিকাংশের মতবিরোধ বা দ্বন্দ্ব নাই। সর্বহারাদের জন্য এদের লোকদেখানো ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহণ কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে!

আমরা সেই শেষ সময়েই হাঁটছি, শুধু বুঝতেই বুঝি পারছি না...!
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments