সর্বশেষ

ভারতের পুতুল জাতীয় পার্টির বিচার কেনো জরুরি? জিএম কাদেরের সাক্ষাৎকার!

বিশ্ববেহায়া এরশাদের ডিগবাজির অন্যন্য নজির


গতকাল প্রথম আলোতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের 'আমি জাতীয় পার্টিকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম' শীর্ষক সাক্ষাৎকার মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। সাক্ষাৎকারটি এই লিংকে জিএম কাদেরের সাক্ষাৎকার পাবেন।

একেবারে থার্ড ক্লাস লো কোয়ালিটি মেরুদণ্ডহীন একটি দলের অমেরুদণ্ডী প্রধানের বক্তব্য ছাড়া কিছুই মনে হলো না! যদিও এই সাক্ষাৎকারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এখানে জিএম কাদের কিছু বিষয় অকপটে শেয়ার করেছেন যেমন—'ভারতের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না' এই কথা তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।

অন্য দলের চাপে পড়ে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সক্রিয় করতে ভূমিকা রাখার পর আবার নির্লজ্জের মত দল বাঁচানোর অভিযোগ করেছেন তিনি! দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার হলে, আওয়ামী লীগকে গণতান্ত্রিক রূপ থেকে বেরিয়ে দানবাকৃতি ধারণের অনন্য সহযোগী জাতীয় পার্টিরও বিচার হওয়া জরুরি নয় কি? সে তো ক্ষমতার হালুয়া-রুটি কোনো অংশে কম খায়নি

২।

মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক চরিত্র ছেড়ে ফ্যাসিস্ট চরিত্র বিনির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী শক্তি হচ্ছে এই জাতীয় পার্টিসে এরশাদ, রওশন বা জিএম কাদের যার নামই বলুন না কেনজাতীয় পার্টিই আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রূপের অন্যতম কারিগর৷ 

দলে গণতন্ত্র চর্চা না থাকলেও শেখ হাসিনার হেজেমনিক কিছু রোল ছিল যা ভারতের সর্বেসর্বা মাতুব্বরিতে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা কখনো তৈরি করতো বলেই আমার অভিমত। সিনক্রেটিক রাজনীতি ভার‍তের সিরাম ইনস্টিটিউটের বেঈমানির পর চীনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন বানানোর সময় এটি নজরে পড়েছিল। 

কারণেইঅস্বীকার করা যাবেনাআওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কিছুটা কাউন্টার রেজিস্ট্যান্স ছিল। ক্ষেত্রে ২০১২ তে প্রকাশিত 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে মুজিবের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান উৎসাহ দেয়। 

আওয়ামী লীগের নিজস্ব হিজিমনিস্বাধীন বাংলাদেশের সাথে যেহেতু জনতার মুজিব ভাইয়ের সম্পর্কটিকিয়ে রাখতেই দল হিসেবে তার পুরো সভরেইনটি ভারত বা নিতে পারেনি৷ কারণেই সুবির ভৌমিক বা মুন্নি সাহাদের সেট করতো ভারত আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কী হচ্ছে জানতে। 

কিন্তু দল হিসেবে এরশাদের জাতীয় পার্টির সত্যিকার অর্থে কোনো সভরেইনটি ছিলোনা। এই ভাঁড়দের যাবতীয় নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দিল্লিকেন্দ্রীক হিন্দুত্ববাদীরা ঠিক করে দিতো। জাতির ক্রান্তিলগ্নে বা পিভোটাল মোমেন্টে এরশাদের, রওশনের বা জিএম কাদেরের ডিগবাজিগুলো পুরোটা ভারত নিয়ন্ত্রণ করতো। সোজাকথায় নির্ধারণ করতো জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত। সুনীল শুভ নামের কেউ একজন লিয়াঁজো করতে পারেন বিজেপির সাথে যোগাযোগ

৩।

বাংলাদেশে যে এর এজেন্ট খোঁজেন অনেকে, জাতীয় পার্টি হচ্ছে এর মূল পলিটিক্যাল ডেন৷ জাতীয় পার্টিকে বাংলাদেশের রাজনীতির ডিসাইসিভ ফোর্স হিসেবে তৈরি করা ভারতের এজেন্ডাসেই বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের সময় কুচবিহার থেকে আসা এরশাদের সেনাপ্রধান হওয়া থেকেই। তরতাজা মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তারা থাকার পরেও অমুক্তিযোদ্ধা এরশাদকে সেনাপ্রধান করা ছিল মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের অন্যতম বড় প্রশাসনিক ভুল সিদ্ধান্ত। যে ভুলটি বঙ্গবন্ধু করেছিলেন স্বাধীনতার পরপর সেনাবাহিনীর মধ্যে নন্দিত এবং দাপ্তরিকভাবে সিনিয়র জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে সফিউল্লার মত দুর্বলচিত্ত কর্মকর্তাকে সেনাপ্রধান করা। 

মনে রাখবেন, এরশাদ শুধু অমুক্তিযোদ্ধা নয়, সে ১৯৭১ এর পুরোটা সময় পাকিস্তানে ছিল। সিমলা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে ফিরে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে আসে এরশাদ। ভারত সেই সময়েই আমার মনে হয় তাকে দিয়ে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করে।

জিয়াউর রহমান কী কারণে এই ভারতীয় বলয়ের জোকারটিকে সেনাপ্রধান করেছিলেন আমি জানিনা। তবে আমি এটা বুঝতে পারি, যে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনা একসাথে লড়াই করলেন সেই পতিত স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। শুধু পুনর্বাসন? এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও করা হয়! ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ এরশাদের চেয়ে উপরের কাতারেই শেখ হাসিনার নাম ইতিহাস মনে করবেযেহেতু স্বৈরাচার এরশাদ দেশ ছেড়ে পালায়নি। আমার মনে হয়, এইসবে ভারত যে দিলখুশ ছিলো তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। 

৪।

১৯৮১ এর ৩০ মে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে গেলেন আর সেনাপ্রধান এরশাদ ঢাকায়ও বা কেন থাকলেন সে কথা এরশাদ বলে যাননি। আবার, মঞ্জুরকে এরশাদ কেন দ্রুত ঝুলিয়ে দিলো সেটিও আমরা জানিনা। যতদূর জানি, মঞ্জুর সিভিল প্রশাসনের হাতে থেকে জাতিকে কিছু জানাতে চেয়েছিলেন! এরশাদ কেন সে সুযোগ দিলোনা? এরশাদ মরে যাওয়ার আগে আমাদের তা জানিয়ে যায়নি। সে আবার বঙ্গবন্ধুর ত্যাকারীদেরও রাজনীতিতে সুযোগ করে দিয়েছিল! কিন্তু জিয়া ত্যা কারীদের কেন সে শেষ করলো? তার ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো? আমি আশা করবো . মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা এর পরে (যদি আসে) বিএনপি সরকার জেড ফোর্সের বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ত্যার পুনর্তদন্ত এর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন৷ ত্যার যারা বেনিফিশিয়ারিইনক্লুডিং এরশাদ, হাসিনা অন্যান্যরাতাদের সবার ভূমিকা যাচাই করা দরকার। আমি এরশাদের মৃত্যুর আগেও দাবি করেছিলাম, এরশাদকে বাংলাদেশের ইতিহাসের  গুপ্ত অংশ খোলাসা করতে বাধ্য করুন। সে বঙ্গবন্ধু থেকে জিয়া ত্যার আদ্যোপান্ত সবচেয়ে ভালো জানে। কারণ, সে হচ্ছে সবচেয়ে বড় সুবিধাবাদী বেঈমান। 


জিএম কাদেরের সাক্ষাৎকারে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ এর নির্বাচনের আগে মঞ্জুর হ ত্যায় এরশাদকে ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছিল বলে তিনি জানান৷ 

আওয়ামী লীগ এই ইফেকটিভ থ্রেটটি দেওয়ার ট্রাম্প কার্ড কীভাবে পেলো? আমার বিশ্বাস, এইটা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আওয়ামী লীগকে সরবরাহ করেছে। যেই ভারত থেকে এরশাদকে প্রশিক্ষণ দিয়ে জিয়াউর রহমানকে ত্যার মাধ্যমে এরশাদের মত চরিত্রহীন ক্লাউনকে ক্ষমতায় বসায় তারা এরশাদের গোপন নানা কীর্তির নকশা নকল করে রাখেনি ভেবেছেন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যত নাটক হয়েছে জাতীয় পার্টি সেই নাটকের মূখ্য চরিত্র হয়েছে। সে এরশাদের জেলে বসে আওয়ামী লীগের পক্ষে আসা, ২০১৪ এর নির্বাচনে অসুস্থতার নাটক, ২০১৮ এর নির্বাচনের আগে জিএম কাদেরের ভারত সফর এর সব বিষয়ে জাতীয় পার্টিকে সেন্ট্রালে রাখা হয়েছে। আজকের পতিত স্বৈরাচার হিসেবে পঠিত শেখ হাসিনা ২০১৪ তেই বিনাশ হয়ে যেত যদি ভারতের সুজাতা প্রণবের দালাল হিসেবে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাজানো অধীনে নির্বাচনে না আসতো৷ আওয়ামী ফ্যাসিবাদ তৈরিতে অবশ্য সেনাবাহিনী, আমলা, পুলিশ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা, বুদ্ধিজীবী নামের অমেরুদণ্ডী, শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী নামের ভার‍তের আধিপত্যের দালাল এবং নিউজ মিডিয়া নামের হিন্দুত্ববাদের চাকরগুলো জড়িত তথাপি দল হিসেবে জাতীয় পার্টি নির্লজ্জ দালালী করে বাংলাদেশে ভারতের এজেন্ডার পেয়াদা হয়েছে। এরশাদের আরেক নাম পেয়ারা, সে কাজ করেছে ভারতের যেন সে ভারতের পেয়ারা। জাতীয় পার্টিকেও বাংলাদেশে ফোকাসে রাখতে ভারত বিশেষ নজর দিয়েছিল। 

এই মূখ্যকরণ কে করেছে? আমার মতে, করেছে ভারত! আওয়ামী লীগের প্রয়োজনে হোক বা প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে হোক বা আওয়ামী লীগকে প্রেসারে রাখতে হোকভার‍তীয় গোয়েন্দা সংস্থা জাতীয় পার্টির দখল নিয়েছিল। 

এই কথা আপনারা নানা ছাঁকনিতে নিষ্কাশনের মাধ্যমে প্রকাশিত জিএম কাদেরের সাক্ষাৎকারটি পড়লেই বুঝতে পারবেন৷ আমি কমেন্ট ঝুড়িতে দিলাম।

এরপর ফ্যাসিবাদ সক্রিয় করতে অবদান রাখা আর কাদের আলোচনা জরুরি? ইনুর জাসদ, মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি, বড়ুয়ার সাম্যবাদী ইত্যাদি।

 

 

 

পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments