সর্বশেষ

মনে পড়ে মহাপুরুষ হুমায়ূন তোমাকে


অনন্ত নক্ষত্রবীথিতে তুমি
অন্যভূবনে
চলে গেলে দরজার ওপাশে,
একটি দুর্ভেদ্য দেয়াল গড়ে দিয়ে
তোমার ও আমার মাঝে
ফাউন্টেন, কাঠপেন্সিল, ভয় আর বৃষ্টিবিলাস কত কিছুতে তোমার ছোঁয়া, কে বলে কাহারে
তবু মরাপ্রাণ কথা বলেনা, শব্দরা কথা বলে মানুষের সাথে, মনে পড়ে তাহারে , আহারে !

তন্দ্রাবিলাসে ও জোছনার ভুলে,
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
অথবা
তেতুল বনের ভয়াবহ সৌন্দর্যে
তারা তিনজনই নয়,
অনেক তারাই বিমুগ্ধ জোছনাত্রয়ীর মাঝে
চন্দ্রালোকে ভেজে সহস্র যুবক, যুবতীরা লিলুয়া বাতাসে এলোকেশে মেলে ধরে অসম্ভব রূপবতী অবয়ব
নিঃশব্দে প্রকৃতির আয়নাঘরে ।

পোকায় খাওয়া অন্তরে,
ঘুনে ধরা দাঁড়কাকের প্রতিচ্ছবি
বিপদ এনেছিল
তুমি তা ফুটিয়েছিল নিপুণ হাতে
কুটু মিয়া কিংবা মুন্সির হৃদয় দিয়ে তুমি এঁকেছিলে সুররিয়াল পৃথিবী এক অনবদ্য
কে করেছে তা আর বাংলা সাহিত্যে, যতই আনুক অন্যরা গদ্য, শ্লোক অথবা পদ্য?


তুমি আমায় ডাকোনিকো
ছুটির নিমন্ত্রণে,
ময়ুরাক্ষী নদীতে
দেবী অথবা নলিনী বাবুর
সঙ্গে স্নান করতে,
নী কিংবা ওমেগা কিংবা ফিহা সমীকরণের জটিলতা তাই কাটেনি আজো, ঘোর লাগে প্রতি অমাবশ্যায় আমাদের নগরে
নীলপদ্ম, ছাতিম, কৃষ্ণচূড়া, অলকানন্দা, মহুয়া, নয়নতারা, জোছনার ফুল, বেলি আর টগরে
আমি ও আমরা অপেক্ষায় থাকি ভালবেসে সেই পরিবেশ,-অদ্ভূত ভুতুড়ে ।

কৃষ্ণপক্ষের কৃষ্ণগহবরে
হারালে তুমি
কোথাও কেউ নেই
শুভ্র হয়েছে সবুজ বন, দারুচিনি দ্বীপ, শ্রাবণ মেঘের দিনে
আকাশ ফেঁটে পড়েনিকো জরি
মনে পড়ে মহাপুরুষ, ভালবাসি তোমার ভ্রু কুঁচকানো বহু পরিচিত সেই মুখমন্ডল
মনে পড়ে মহাপুরুষ, বাদল-মাজেদা-রফিক, রহস্য, ৯ নং বিপদ সংকেত, গন্ডগোল ।

হে সম্রাট, তুমি নির্বাসনে
প্রেম-বৃষ্টি-জোছনা কী দেখতে পাও,
দেখতে যেভাবে শঙ্খনীল কারাগারে
রাশিয়ান পরী, মধ্যবিত্তের অয়োময়, কোথাও কি নেই, বৃহন্নলার রহস্যপ্রহরে?

রেখে গেলে রহস্য
অমিমাংসিত
হিমুরা একযোগে মানসিক খালি পায়ে তাই ঘুরছে,
চারদিকে হলুদ আর হলুদ,কষ্টহলুদ, আনন্দ হলুদ, রহস্য হলুদ
নিউমার্কেট থেকে আজিমপুর, পলাশী থেকে আজিজ হুলদ !!
কোন মৃন্ময়ী, কোন দেবী, কোন নিশীথিনী, কোন পারুল কিংবা রূপারা আর তা দেখেনা।

কত দেখা,কত কথা
কত অনুভূতি
হঠাত্‍ ই শনি , না না ,এটা নয় শনি
এতো হুমায়ূনীয় আগুনের পরশমণি ।


নন্দিত তুমি এ ধরাতে,
নরকের পিশাচ তা বোঝেনা
মাতাল হাওয়ায় মেতে থাকে তবু
মাতাল হাওয়া চেনেনা ।

তুমি হুমায়ুন, তুমি
কেড়ে নিয়েছো জনহৃদয়ের সবটুকু ভূমি
আমি সাধারণ অতি,
হতে চাই যুগপৎ হিমু ,শুভ্র ও মিসির আলী ।।

চলে যায় তুমিহীন বসন্তের দিন
চলে গেলে,
শ্রাবণ মেঘের দিনে
দূর আমেরিকায়, স্বদেশ ছেড়ে
কান্দি মনে পড়লেই মরিলে কান্দিতে নিষেধের পরেও
আমিও যে চলেছি সেদিনের দিকে
তোমার অবস্থান দেখতে
সেই অনন্ত নক্ষত্রবীথিতে
নীলমানুষ আমি
তোমার মৃত্যু ও জন্মের এই  ক্ষণে
আজ আমি কোথাও যাবোনা, শুধু একাগ্রচিত্তে পড়ব তোমাকে
কত দুয়ারিও যে নিভৃতে মনে করে তোমায়, সে খবর রাখে কে?

[ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ স্মরণে আমি।]
পাঠ অনুভূতি