'আইজক্যা টাহা কয়ডা দিয়ে দাও,বাফু।পোলাপাইনগুলো না খায়া আছে' গ্রামের জমিদার রেজাউল মিয়ার কাছে হাতজোড় করে বলে দিনমজুর ছিদ্দিক।
এহন আমার কাছে টাহা ফয়সা নাই,পরে নিস।ও ছিদ্দিক,শুনছিস নিকি এইবার বলে ধান বুননি পড়বে?'প্রসঙ্গ পাল্টে দেয় রেজাউল।
ছিদ্দিক কেন ধান রোয়া থেকে বোনা ভাল তা বলা শুরু করে।টাকার কথা ছিদ্দিকেরা মনে রাখেনা।
মা,ভাত দেও।খিদেতে বাঁচতিছিনা'ছিদ্দিকের বড় ছেলে খলিলের করুন আকুতি।'কহান দিয়া দেব,তোর বাপরে কইছি পাওনা টাহা আইন্যা সদাই অরতি।এহনো ফেরলোনা'ছিদ্দিকের বউ রাশিদা বলে।
সেই দুপুর থেকে বাচ্চাগুলো ঘ্যাঁ ঘ্যাঁ করে কাঁদছে। পাশের বাড়ির শহীদুলের হাঁকে কান্না থামে।
'ও বিটি,মাইক থামাবা?এট্রু শান্তি মতন ঘোম পড়তি দাও।'শহীদুল বলে।তার ছেলে রমজান আলী দিন-রাত সাউন্ড বক্সে 'কাঁটা লাগা'গান শুনলে তার ঘুমে কোনদিন ক্ষতি হয়েছে একথা কেউ বলবেনা।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে এমন সময় বুননি ধানের গল্প শেষ করে ছিদ্দিক।রেজাউল বলে,আজ তাইলে ওঠো মিয়া।বাড়ি গিয়া বউ ছাওয়াল মাইয়ারে একটু সুমায় দেও।'ছিদ্দিক 'জ্বে আচ্ছা'বলে উঠে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেনা।
রাস্তা দিয়ে একা একা ছিদ্দিক হাঁটছে।খালি পায়ে হাঁটার কারণে ছিদ্দিকের পায়ে রাস্তা থেকে একটা চাড়া ঢুকে যায়।রক্ত ঝরছে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে।সেদিকে লক্ষ নেই তার।আজ হলে দুইদিন হবে সে বউ ছেলেমেয়েদের খাবার দিতে পারেনি।সকাল বেলা ফেরিওয়ালা মোয়া নিয়ে যাওয়ার সময় তার ছোট ছেলে ইয়াকুব খেতে চাইছিল।ছিদ্দিক কিনে দিতে পারেনি।বাড়ির সামনের ছোট্র উঠানে গড়াগড়ি দিয়ে অনেকে কেঁদেছিল ইয়াকুব ছেলেটা।১টাকার একটা মোয়া ছিদ্দিক কিনে দিতে পারেনি বলে।
রেজাউল মিয়ার জমিতে কাজ করে ৫০০টাকা বাকি রয়েছে।আজ দুইমাস হলো ঐ টাকা দেয়না রেজাউল।ওদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের কামরান ছারের কাছ থেকে কিস্তিতে টাকা এনেছে।সেই টাকার সুদ দ্ধিগুন উদ্যমে বেড়ে চলেছে।কী করবে ছিদ্দিক ভেবে পায়না।
বনের ছন দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘরের কাছে আসতেই ছিদ্দিক তার বউয়ের আর্তচিত্কার শুনতে পায়।
'ও আল্লারে !আমার বাপধনের কী অইল?ও বাপ তুই কতা ক।'
0 Comments