সর্বশেষ

ভূমিকম্প,কিয়ামত ও আল্লাহ'র অস্তিত্ত্ব


১.
ভূমিকম্প নিয়ে অনেকে অনেক কথা লিখেছে,লিখেছেন।অনেকে আহ্লাদি হয়ে 'সেইফটি নোটিফিকেশান'ও দিয়েছে।এত আধুনিকতার মধ্যে আমি একটু 'মধ্যযুগীয়' ভিন্ন কথা ভাবছি।ভূমিকম্পকে আমার মনে হয়েছে বিশাল নিদর্শন,চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো সতর্কবার্তা।কিসের নির্দশন,কিসের বার্তা?
২.
আল্লাহ'র অস্তিত্ত্বের।একজন মহাস্রষ্টার অস্তিত্ত্বের।বেদ,বাইবেল,জেন্দাআবেস্তা,ত্রিপিটক ও কোরআনে 'আল্লাহ' গুণবাচক নামের যে স্বত্ত্বা নিজেকে বিশ্বব্রহ্মান্ডের স্রষ্টা দাবি করেছেন সেই আল্লাহ'র অস্তিত্ত্বের প্রমাণ ভূমিকম্প।
আস্তিক বা নাস্তিকতার দ্বন্দ্ব ঈশ্বর থাকা না থাকা নিয়ে।আমার মনে হয় ভূমিকম্পই ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।এটি এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা সম্পর্কে আগাম কোন বার্তা পাওয়া যায়না।ভূমিকম্পের কাছে তীব্র অসহায় বিজ্ঞান,বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানবাদীতা।ভূমিকম্প কখন,কোথায় হবে এ জ্ঞান কেবল স্রষ্টার।বিজ্ঞানের পরম উত্‍কর্ষতার সময়েও পৃথিবীর ঝাঁকুনি এবং আমাদের অসহায়ত্ত্ব নিচের কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়-
'যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে।যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে।এবং মানুষ বলবে এর (পৃথিবীর) কি হলো?'[যিলযাল,১-৩ আয়াত]
এই আয়াতগুলো ইসলাম ধর্মের গ্রন্থ কোরানের।এতে আল্লাহ কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তের কথা বলেছেন।সেসময় ভূমিকম্প হবে আর এতে পৃথিবীর অভ্যন্তরের সম্পদ,খনিজ,অগ্নিদলা ইত্যাদি বেরিয়ে আসবে।মানুষ ভয়,উত্‍কন্ঠা ও আতঙ্কে বলবে,হায়!পৃথিবীর হলো টা কি?আজ নেপালের ভূমিকম্পে আমাদের কেঁপে ওঠা এসব কি স্মরণ করিয়ে দেয়?আমরাও কি বলিনি,কাহিনী কি?২৪ ঘন্টার কম ব্যবধানে দুইদুইটি ভূমিকম্প হলো কেন?
পৃথিবী ধ্বংস করতে যে কয়েকটি দুর্যোগ আল্লাহ ব্যবহার করবেন তার অন্যতম হচ্ছে ভূমিকম্প।ভূমিকম্প যে মানুষের জ্ঞানের বাইরে তা প্রায় ১৫০০ বছর আগে কে মুহম্মদ(স) কে জানিয়ে দিল কে?বিজ্ঞানের তীব্র উন্নতির যুগেও ভূমিকম্প সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দূরে থাক সামান্য জ্ঞানও কেন অর্জিত হচ্ছেনা?কেয়ামতের পূর্বাভাস হিসেবে ঘনঘন ভূমিকম্পের কথা মুহম্মদ (স) কেন বারবার বলতেন?
৩.
ভূমিকম্পের মত আরো দুইটি দুর্যোগ আছে যা কেয়ামত বা মহাপ্রলয়ের সময় ব্যবহৃত হবে।এ দুটি হচ্ছে আগ্নেয়গিরি এবং প্রবল পানি।একটু চিন্তা করে দেখবেন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্‍পাত কখন হবে তা মানুষ জানেনা।এবং সারা পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরিগুলো এমনভাবে সজ্জিত যেন কেউ পৃথিবীকে বিস্ফোরিত করে উড়িয়ে দেয়ার জন্য এদের পুঁতে রেখেছে।আর একটি পানি।এন্টার্কটিকার বরফ দিন দিন গলছে।সমুদ্রে বেড়ে যাচ্ছে পানি।পৃথিবী তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।অথচ পর্বতমালা ও এন্টার্কটিকার বরফগলা ঠেকানো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।ভূমিকম্প,আগ্নেয়গিরি ও বরফগলে মহাপ্লাবন এসে একটি সম্মিলিত মহাদুর্যোগের পরিকল্পনা করে রেখেছেন আল্লাহ,বুদ্ধিমান যে কেউ এটা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন।
তবে এ কথা স্মরণ রাখা ভালো যে এই একই পদ্ধতিতে মহাবিশ্ব ধ্বংস হবে এমন কোন বর্ণনা নেই।বরং এক্ষেত্রে চাঁদ,সূর্যের আলোহীনতার কথা বলা হয়েছে যা ভিন্ন মাত্রার দুর্যোগকে নির্দেশ করে।গ্রহ নক্ষত্রের কক্ষপথ,অভিকর্ষ ও মহাকর্ষ মহাশূন্যে এক মহাসংঘর্ষকে বৈজ্ঞানিকভাবেই সমর্থন করতে বাধ্য।
৪.
মুহম্মদ (স) পৃথিবীর সর্বশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যেসব কথা বলেছেন তারমধ্যে শাম বা সিরিয়া ,খোরাসান বা আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে গোলযোগ অন্যতম।আফগানিস্তান,সিরিয়া ও ইয়েমেনে কি বিশ্বকাঁপানো যুদ্ধ হচ্ছেনা?
সমকামীতা বৃদ্ধি,ব্যভিচারের প্রসারতা,মহামারীর(এইডস,ইবোলা,বার্ডফ্লু)ধারাবাহিকতা,হত্যাকান্ড,সুদের বৈধতা,মসজিদের প্রাচুর্য,মৃত্যুভীতি বেড়ে যাওয়া,যোগ্যদের অবমূল্যায়ন ও অযোগ্যদের ক্ষমতা প্রাপ্তি,ভোগবাদের প্রসার প্রভৃতি শেষ সময়ের আগে দেখা যাবে বলে অসংখ্য হাদিসে বর্ণিত।এসব কি এখন দেখা যাচ্ছেনা?আমরা কি খোঁজ রাখি কোন যুগের মানুষ আমরা?
৫।
ইব্রাহিমীয় ধর্মে(ইহুদী,খ্রীস্টান ও ইসলাম) পৃথিবী ধ্বংসের কথা সরাসরি উল্লেখ আছে।বৌদ্ধধর্মে মানব বিপর্যয়ের কথা আছে।সনাতন ধর্মের আসমানী গ্রন্থ বেদে রয়েছে আল্লাহ,কলিযুগ ও কল্কি অবতারের কথা।কলিযুগ অর্থাত্‍ শেষ যুগ।এরমানে এরপর আর যুগ নেই।অর্থাত্‍ পৃথিবীর শেষ অর্থাত্‍ কেয়ামত।
***********
আমরা কি স্রষ্টার কাছে ফিরে যেতে প্রস্তুত?আমরা কি অপরের ক্ষতি করা থেকে বিরত রেখেছি নিজেদের?আমরা কি আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছি?আমরা কি মহাপ্রলয়ের পর পুনরুত্থানের কথা মনে রেখেছি?মা-বাবাকে সেবা করেছি?অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি?আমরা কি সত্যকে খুঁজেছি?আমরা কি আল্লাহকে খুঁজেছি?
আমরা ভূমিকম্পকে শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভেবে আবারো যদি অবিশ্বাস,অন্যায়,অবিচার,পাপ,ব্যভিচার,মিথ্যাচার,সুদ-ঘুষ,গীবত,সর্বনাশ,লুন্ঠন,হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠি তবে নিজেরাই নিজেদার মহাক্ষতি করবো।আল্লাহর নিদর্শন দেখে আমাদের অবিশ্বাসী আচরণ বিষয়ে নিম্নোক্ত বাক্যটি দেখুন-
'তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে,এটা তো চিরাগত যাদু।'[আল ক্বামার,আয়াত-২]
আমরা কি মুখ ফিরিয়ে নেয়নি ভূমিকম্প দেখে?আমরা কি আবার আনন্দ-ফূর্তি,অনাচার,ব্যভিচার,খুন,সুদে মাতিনি?আমরা এই আয়াত অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থের দলে নই কি?আমরা বুঝতে পারছিনা কারণ এই আয়াতে আল্লাহর নিদর্শনকে 'যাদু'বলে উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে,আর আমরা এতো 'প্রাকৃতিক নিয়ম' বা 'বৈজ্ঞানিক সত্য' বলে উড়িয়ে দিই।অথচ এসব নিদর্শন।ভূমিকম্প বড় ভয়ঙ্কর কিছুর পূর্বাভাস।ঘনঘন ভূমিকম্প আরো ভয়ঙ্কর কিছু একটার আগমনী ধ্বনি।এর সতর্কবার্তা বহু আগেই এক মহামানবের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।বিশ্বাস করা না করা মানুষের ব্যাপার,আল্লাহর এতে কিছু যায় বা আসেনা।তিনি এক ও অদ্বিতীয়,তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।
আমরা জানি-ই-না বা ভুলে যাই বা অস্বীকার করি আল্লাহর অস্তিত্ত্ব 'আছে না নেই' এই তর্ক চলাকালীন সময়েই প্রায় পনের শত বছর আগে কোরআনে ও হাদিসে বর্ণিত ঘটনাগুলো চোখের সামনে একের পর এক ঘটেই চলেছে...
[এবং উপরে প্রদত্ত প্রতিটি শব্দ ও বিষয় সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ-ই সবচেয়ে ভালো জানেন।]
(২০১৫ এর ২৭ এপ্রিল লিখিত)
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments