সর্বশেষ

১৫ই আগস্ট ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা


স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক।এই বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা।তিনি ছিলেন প্রকৃত জাতীয়তাবাদী।তাঁর চিন্তা ও ভাবনা ছিল শুধু বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে।সাম্রাজ্যবাদীদের তিনি যম ছিলেন।ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের CIA এর নজরে আসে তাঁর এই দেশপ্রেম।মার্কিন দালাল পশ্চিম পাকিস্তানীদের স্বার্থে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরোধীতা করে আমেরিকা ও চীন।শীতল যুদ্ধে বিজয়ী হতে তত্‍কালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়।সামরিক স্বার্থে আসে ভারত।বঙ্গবন্ধুর ঘোষণায় মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম বীরত্ত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
চিরসংগ্রামী অনার্য বাঙালি লড়াকু।এই লড়াকু জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা শেখ মুজিব।তাঁর জাতীয়তাবোধ এতই প্রবল ছিল যে ১৯৭২ সালে দেশে ফেরার আগে ইন্দিরার সাথে কথার শুরুই ছিল,'আমার দেশ থেকে আপনার সৈন্য কবে তুলবেন?'।বাংলাদেশে এমন প্রবল জাতীয়তাবোধসম্পন্ন নেতার ক্ষমতাগ্রহণে ভীত হয় CIA,ISI ও RAW এবং এই তিনটি গোয়েন্দা সংস্থাই একযোগে শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত ছিল।
বঙ্গবন্ধুর দিকে দেশীয় শকুনদের কুদৃষ্টি CIA,ISI ও RAW এর অজানা ছিলনা।১৫ আগস্টের মহাট্রাজেডির নেপথ্যে এদের স্বার্থ এক জায়গায় এসে মিলিত কি না সেটি আলোচনার দাবী রাখে।
২।
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মধ্যে যারা ছিল তাদের প্রতি সিমপ্যাথেটিক একটি শ্রেণী আমাদের দেশে রয়েছে।এই শ্রেণী প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বলতে চায়,'দেশ' ও 'জাতির' 'স্বার্থে' খুনীরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।আমার কাছে এই ব্যাপারটিকে চরম অযৌক্তিক মনে হয়।কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পিছনে জাতীয় স্বার্থ নয়,ছিল ব্যক্তিস্বার্থ।'তত্‍কালীন মন্ত্রী গাজীর পরিবারের সঙ্গে মেজর ডালিমের ব্যক্তিগত ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে হত্যার নকশা করা হয়' খুনীরা এই কথা বলতে চায়।তাহলে দেখা যাচ্ছে একটি ব্যক্তিগত ইস্যুকে জাতির উপর আরোপ করছে বহিষ্কৃত এসব সাবেক সেনাকর্মকর্তা ও তাদের গোঁড়া সমর্থক ও অনুসারীরা।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেনাকর্মকর্তা হামিদের লিখিত 'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা'বইয়েও ব্যক্তি আক্রোশ থেকে হত্যাযজ্ঞের কথা লিখেছেন।পরবর্তীতে এই ব্যক্তি আক্রোশটাকে ঢাকতেই জাতীয় স্বার্থের প্রোপাগান্ডা চালানো হয়।প্রশ্ন হচ্ছে এত জাতীয় স্বার্থবাদীরা এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে দেশ ছেড়ে পালালো কেন?এত বড় দেশপ্রেমিকরা তখন দেশে থেকে নিজেদের কথিত 'মহান কৃতকর্মের'ব্যাপারে জনগণের কাছে জবাবদিহি না করে চোরের মত পালিয়ে গেল কেন?
৩।
বাংলাদেশের এই ৪৫ বছরের ইতিহাসে যত খুন,যত অনাচার,যত অবিচার,যত অভ্যত্থান,যত দুর্নীতি,যত অনিয়ম এসেছে তার সবকিছুর জন্য দায়ি ১৫ আগস্টের ঘাতকেরা।বিপুল সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রের সকল নীতিনির্ধারকদের(Policy Makers)একেবারে প্রভাতে হত্যা করে বাংলাদেশকে জন্মের পর বিকলাঙ্গ করে দেয়া হয়েছে।রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে।
৪।
স্বাধীনতার এ মহান স্থপতিকে পৈচাশিকভাবে সপরিবারে হত্যা করাকে জায়েজ করতে এদেশের বামপন্থী ও কট্রর পাকিস্তানপন্থীদের একসূত্রে গাঁথা দেখা যায়।তত্‍কালীন বামপন্থী পত্রিকাগুলো অহেতুক মুজিব সরকারকে অজনপ্রিয় দেখানোর চেষ্টা করে।বামপন্থী সাংবাদিক ও লেখকেরা ঘটনার অতিরঞ্জন করে প্রচার করে।আর পাকিস্তানী প্রেতাত্মারা মুজিবের সমালোচনার সুযোগ পায়।এই অপপ্রচার ও মিথ্যাচার দেশে একটা সংকট চলছে বলে প্রচার করে।বামপন্থীদের মুজিববিদ্বেষের মূলে ছিল মুজিব সমাজতন্ত্রকে আদর্শ হিসেবে বিশ্বাস করতেন,তবে চীনপন্থী বা রাশিয়াপন্থী হতে নয়।শেখ মুজিব বাংলাদেশপন্থী ছিলেন।শত্রুরা বাংলাদেশপন্থীদের ভয় পায়।
৫।
পনের আগস্ট জাতীয় শোক দিবস।১৯৭৫ সালের ট্রাজেডির পর এই ঘটনার সুবিধাভোগীরা খুনীদের পুনর্বাসন করে দেশ ও জাতিকে আরো অনিরাপদ করেছে।এর ফলাফল জিয়া নিজেই খুন হয়েছেন।উত্থান হয়ে এরশাদের।১৫ আগস্টের সুবিধাভোগী এরশাদ এখনো বেঁচে আছে।আমাদের সামনে সুযোগ রয়েছে ১৫ আগস্টের ভেতরের কথা জানার।আমার বিশ্বাস এরশাদ এই ঘটনা এবং ১৯৮০ এর ঘটনা দুটোর ব্যাপারে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য দিতে পারেন।জাতির বিভাজন কমাতে এই ব্যক্তির জবাবদিহিতা করা জরুরি।পনের আগস্টের বর্বর হত্যাকান্ড এদেশের রাজনৈতিক সহনশীলতাকে খুন করে।অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও ভৌগলিক গুরুত্ত্বের উপর অযাচিত বাঁধা আরোপ করে।এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত,এর সমর্থক,বহিঃশক্তিকে জাতীয় স্বার্থে চিহ্নিত করা অতীব জরুরি।
রাষ্ট্রের স্বাধীনতার স্থপতিকে তাঁর নিজস্ব পলিসি প্রয়োগের জন্য ন্যূনতম সময় না দিয়ে তাঁকে হত্যা করা একটি সুদূরপ্রসারী নীল নকশার অংশ বলেই মনে হয়।আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে এশিয়ার পরাশক্তি হিসেবেই বাংলাদেশ দাঁড়াতো।সেই ভয়ে ভীত ছিল শত্রুরা।
শোক দিবসে মহান শেখ মুজিবুর রহমানের গরীবের প্রতি ভালবাসা ও বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁর ইতিবাচক স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের শপথের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করবো আমরা।আর আগস্ট ট্রাজেডির অপূরণীয় ক্ষতির নেপথ্যের প্রতিটি শক্তির মুখোশ উন্মোচন করা হবে অচিরেই এই কামনা।
2015,14.08
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments