সর্বশেষ

বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় আবেগ ও ব্রিটিশদের টেস্ট ম্যাচে হারানোর কারণ



আর মাত্র ১০৩ রান । হাতে টানা দেঢ়টা দিন ।মুশফিক ভাই দায়িত্ত্ব নিয়ে দেশের বিজয়ে কতদিন বড় কোন অবদান নেই । আজ করতে হবে । সাব্বিরকে নিয়ে মাঠে থাক ভাই । ১০০ রানের নিচে টার্গেট স্কোর চলে আসলে ইংলিশরা খেই হারিয়ে ফেলবে । আমাদের খেই না হারিয়ে মাটি কামড়িয়ে থাকতে হবে । টেস্ট ম্যাচ হলেও যেটি শট খেলার বল সেটি খেলে দিতে হবে । আমাদের দোয়া আছে । ঠিকঠাক দেশ ও জাতির কথা ভেবে একটু খেললেই জয় আসবে ইন শা আল্লাহ।

২।
একটু ভাবিস ঐ রিকশাওয়ালার কথা যে খ্যাপ না টেনে একটা গাছের নিচে বসে তার ছোট রেডিওটায় শুনছে খেলা ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে ; ভাবিস ঐ আনসার সদস্যের কথা যে ডিউটির ফাঁকে পাশের দোকান থেকে খবর নিচ্ছে “ কত রান ভাই?”
সেই রোদে পোড়া ট্রাফিক সার্জেন্টের কথা যে সিগনালে থামা গাড়ির যাত্রীদের কাছে খেলার খবর জানতে চাচ্ছে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সব ছেলেদের কথা ভাবিস একটু যারা গুরুত্ত্বপূর্ণ ক্লাসের মধ্যেও অনলাইন আপডেট নিচ্ছে । গ্রামের চায়ের দোকানের বয়স্ক বলাই ভাইয়ের কথা ভাবিস যে  নিজের টেনশনকে সামলে নিতে বলে “আরে বাঙালিরে দিয়ে ভরসা নাই” বলে দোকান থেকে চলে যায় । একটু পর চা খাওয়ার অজুহাতে চোখের কোণা দিয়ে যে দেখে তোদের স্কোর । যে বাংলাদেশ জিতলে স্বল্প আয়ের সংসার হলেও ডাল-চাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ায় ছোটদের । শিশুগুলোর কথা ভাবিস ভাই । ওদের প্রথম ভালবাসা বাংলাদেশ । শিকড়ছাড়া প্রজন্মের মত ওরা পাকিস্তান-ভারতের নির্লজ্জ সমর্থক নয় । ওদের স্বপ্ন তোরা । মাঝ বয়সি আমাদের মায়েদের কথা ভাবিস যারা রান্নার ফাঁকে এসে খেলার খবর নেয় । 
অথবা বাংলাদেশের খেলা দেখোর জন্যই আগে আগে রান্না করে । অথবা সেই মা ও বোনরা যারা  ভাইয়ের সাথে , সন্তানের সাথে তৃপ্তি হাসি আসে তোদের চার-ছক্কা দেখে , তোদের উইকেট নেয়া দেখে । ওরাও টেনশন করছে যেন মাঠেই ওরা । ভাবিস, এসব কথা ভাবিস ভাই । তোরাই পারিস জাতির প্রতিটি প্রাণকে এক সাথে আনন্দের জোয়ারে ভাসাতে ।

৩।
ওয়ানডে ম্যাচ হাত ছাড়া হয়েছে সামান্য ভুলে । সেই ভুল এবার করা যাবেনা । ক্লাস ফাইভে পড়া ইয়াছিন নামের ছেলেটি যে অঝোরে কাঁদে মুশফিক আউট হলে তাঁরে আজ কাঁদানো যাবেনা । ক্যান্টিনের আল -আমিনের দুশ্চিন্তাকে আজ আনন্দে প্রতিস্থাপিত করিস । জীবন ও স্বপ্নকে এক করে আজ আমাদের একটা টেস্ট ম্যাচ বিজয়ের সুখ দে। টিউশনিতে ব্যস্ত থাকা ফয়েজ খান যে প্রতি মুহূর্তে বাংলাদেশের খেলার খোঁজ নিচ্ছে ছাত্র পড়ানোর ফাঁকে তার জীবনকে আজ ব্রিটিশদের পরাজিত করার মাধ্যমে পূর্ণ কর । রাজমিস্ত্রির কাজ করা ইমরান আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমরান এই দুজনের চাওয়া কেবল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বিজয়ের সময় এক হয়ে যায় । সেই একতায় আজ তোরা জাগা ফের বাংলাদেশকে ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক হাবিব স্যারের জয়ের চিন্তাটার কথা আজ ভাবিস তোরা । শেখ আদনান ফাহাদের খেলার রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে ভাবনাটার পূর্ণতা আজ এনে দিস তোরা ব্রিটিশদের পরাজিত করে । আমরা অধীর হয়ে চেয়ে আছি টিভি স্ক্রিনের দিকে ।

৪।
ক্রিকেট রাজনীতি মুক্ত না । প্রকৃতপক্ষে ক্রীড়ার উত্থান ঘটেছেই মূলত ‍যুদ্ধর বিকল্প হিসেবে । তাই ব্রিটিশদের যদি খেলার মাঠে আমরা হারাতে পারি  সেটির রাজনৈতিক গুরুত্ত্ব রয়েছে । কারণ এই সেই ইংল্যান্ড যারা বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পক্ষে । যারা বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন টেস্ট খেলা থেকে বাদ দেয়া ভারত নিয়ন্ত্রিত আইসিসির সিদ্ধান্তের পক্ষে । এরা সেই ব্রিটিশ যারা কদিন আগেও আমাদের নিম্নমানের দলের সাথে খেলে ওদের সাথে বিশ্বকাপ খেলার কথা বলতো । এরা সেই ইংরেজ যারা ২০০ বছর আমাদের শোষণ করছে । আমাদের সম্পদ লুট করছে । আমরা এখন অস্ত্রে না পারি কূটনীতি ও রাজনীতির মাঠে এদের চপেটাঘাত করতে পারি । সেই সক্ষমতা আমাদের আছে ।

৫।
ক্রিকেট বাংলাদেশের প্রাণ । এই খেলাটিকে জাতীয় খেলার তালিকায় নিয়ে আসা উচিত । কারণ এখানে উৎপত্তি না হলেও এটি এখন আমাদের সংষ্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ । তাছাড়া ক্রিকেটের সাথে আমাদের গ্রামের সেই “ পুঁথি লাঠি খেলার ” কিছুটা মিল আছে । সেই খেলায়ও ক্যাচ আছে, ফিল্ডার আছে । ব্যাটের মত চিকন কিছু একটা আছে । তো আমরা দাবি করতেই পারি আমাদের খেলাটিকেই হয়তো ইংলিশরা মোডিফাই করেছে । যদি নাও করে তাও আমাদের ক্রিকেটকে অস্বীকার করার উপায় নেই । ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশারী অদৃশ্য শক্তি । 
প্রিয় অধিনায়ক মুশফিক ভাইয়ের সাথে আমি
এই শক্তি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর সমগ্র বাংলাদেশি বাঙালি জাতিকে একটি সূত্রে গেঁথে ফেলেছে । ক্রিকেট দলকে ভালবাসি । ভালবাসি বাংলাদেশের প্রতিটি ক্রিকেটারকে । হারি আর জিতি , রাগি আর ক্ষেপি, হাসি কিংবা কাঁদি দিন শেষে ফিরে আসি সেই মুশফিক-সাকিব-সাব্বির কিংবা মাশরাফি-তাসকিন-তামিমের কাছে । ওরা আমাদের ভালবাসা । ওরা আমাদের গৌরব । ওরা আমাদের প্রাণশক্তি । ওরাই বাংলাদেশ । আমরাই বাংলাদেশ । ওরা জিতলে আমরা জাগি । আর আমরা জাগলেই জেগে ওঠে প্রিয় বাংলাদেশ ।

আজকেও তাই ওরা জিতলে বাংলাদেশ জাগবে । আমরা পাশে আছি । আমরা জেগে আছি । আমরা চেয়ে আছি । মুশফিকের বিনম্র হাসিতে আরো একটি বিজয় উল্লাস দেখতে ।
পাঠ অনুভূতি