সর্বশেষ

বাঙালির বর্ষবরণ: শেষ ও অপ্রিয় পর্ব




বাঙালির বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান,চৈত্র সংক্রান্তি নিয়ে গত কয়েক দিন লিখেছি।আজ সমাপ্ত হবে নির্মম সত্য দিয়ে।আমাদের দেশের এক শ্রেণীর স্বঘোষিত প্রগতিশীল আছে যারা ইতিহাস বিকৃতিতে সিদ্ধহস্ত।অথবা ব্যাপারটি এমন যে এরা ইতিহাস আসলে জানেইনা।বই পুস্তক জীবনে ধরে দেখেনি তবে ভাবখানা বিরাট পন্ডিত প্রগতিশীলের।এই প্রগতিশীল নামধারী কট্রর অন্ধদের কাছে 'বাঙালি' ও 'মুসলমান' দুই দিগন্তের দুটি শব্দ।এরা বলে,বাঙালি সংষ্কৃতি আর মুসলমানের সংষ্কৃতি এক না।এরা নির্ঘাত মিথ্যুক।এদের কাছে আরব বা পারস্য সম্পর্কীয় সব কিছু মধ্যযুগীয়,তবে পাশ্চাত্যের অবাধ যৌনতা থেকে ধ্বংসযজ্ঞ পূত পবিত্র।এরা বাঙালি সংষ্কৃতি,বাঙালির সংক্রান্তি ও বর্ষবরণে মুসলমানের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখেনা বা চায়না।অথচ ইতিহাস এদের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে।ইতিহাস এতোটাই নিষ্ঠুর ও তাক লাগানো যাতে দেখা যায়,আজকের পহেলা বৈশাখের সৃষ্টিই হয়েছে মুসলমানদের হাতে। 

২। 
পৃথিবীতে সমৃদ্ধ দুচারটি জাতিস্বত্ত্বার মধ্যে বাংলাদেশি বাঙালি একটি যার নিজস্ব দিনপঞ্জিকা আছে।বাংলা সন সৌর নিয়মের।হাজার হাজার বছর আগের শকাব্দের আধুনিক রূপ বঙ্গাব্দ।এর স্রষ্টা ইরানের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী।তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের রাজজ্যোতিষীদের একজন।(ইত্তেফাক,২৭ চৈত্র,১৪২১) 

মুসলমানরা ভারত জয়ের পর হিজরী সন অনুযায়ী রাজকার্য পরিচালনা করতো।কিন্তু চান্দ্র সন হিজরি বাংলার ভূপ্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলনা।যেহেতু ভারতের সবচেয়ে বেশি ফসল হতো বাঙলায় যা খেয়ে মুঘল সাম্রাজ্য ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চল টিকে থাকতো সেহেতু তাদের থেকে খাজনা উত্তোলন আকবরের জরুরী হয়ে পড়ে।কিন্তু সমস্যা করে হিজরি সন।এ অনুযায়ী খাজনার তারিখ দিলে কৃষক পারতোনা দিতে।এই সমস্যা থেকে বাঁচতে ১৫৮৪ সালে ফতেহ উল্লাহ হিজরিসনের বাঙলা রূপ দিতে বাংলা দিনপঞ্জিকাকে লিপিবদ্ধ করেন।সৃষ্টি হয় বাংলা সন।আকবরের ক্ষমতায় আসার সময় থেকে এটি গণনা শুরু হয়।বাংলা প্রথম মাস ছিল চৈত্র।সেটিকে হটিয়ে বৈশাখকে প্রথমে আনা হয়। 
৩। 


এখন প্রশ্ন ১৫৫৬ সালে যে সনের উদ্ভব তা তো বর্তমান ৫০০ সালের মতো হবে।১৪২২ সালের পহেলা বৈশাখ কিভাবে হয়?এখানেই কথা।বাঙলা সন প্রবর্তনের সময়টি অর্থাত্‍ ১৫৫৬ সালের ১১ এপ্রিল হিজরি ৯৬৩ সন ছিল।এই ১১ এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ ধরে ফতেহ উল্লাহ আরবী তথা হিজরী ৯৬৩ বছরকে যুক্ত করে বাংলা সন বা বাঙালা সন প্রবর্তন করেন।এটি পরবর্তীতে বঙ্গাব্দ বা ফসলী সন হিসেবে পরিচিত হয়।মানে আজকের বঙ্গাব্দের জন্ম থেকেই ৯৬৩ বছর ছিল। 


আজকের বাংলা বর্ষপঞ্জি একদিনে হয়নি।১৯৫২ সালে ড মেঘনাদ সাহা কিছুটা সংশোধন করেন এতে।বাংলা একাডেমী এর উদ্যোগে ১৯৬৩ সালে ড শহীদুল্লাহর সভাপতিত্ত্বে একটি কমিটি হয়।এটি ফতেহ উল্লাহ ও মেঘনাদের ভুল সংশোধন করে ১৯৬৬ সালে প্রতিবেদন জমা দেয়।এই প্রতিবেদন ১৯৭১ এর পর গৃহিত হয়।বর্তমানে প্রচলিত বর্ষপঞ্জিটি ১৯৮৮ সালে কার্যকর হয়।(ইত্তেফাক,২৭ শে চৈত্র,১৪২১) 


এই হচ্ছে আমাদের বর্ষপঞ্জির অপ্রিয় ইতিহাস ও মাটি চাপা দিয়ে রাখা সত্য।



১৪ এপ্রিল, ২০১৫।
পাঠ অনুভূতি