সর্বশেষ

কর্পোরেট বৈশাথ দেখে একজন বাঙালির যে কথা অবশ্যই বলতে হয়


অস্তিত্বের লড়াই আমি স্বীকার করি;
বিপন্ন সত্ত্বা রক্ষায় তাই আমি বদ্ধপরিকর !

শত-সহস্র-অজস্র শিকড়হীন পরগাছা
আমার জাতিসত্ত্বায় আঘাত হানে বারবার,
সংকর শরীর,সংকর বস্ত্র,সংকর চিন্তার
আস্ফালন তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে-
আমার ভেতরের সৌন্দর্যকে ম্লান করে !!

নগ্নতাকে পুঁজি করে যে পশুরা
অবিরাম মানুষ হতে চায়,
ধ্রুব 'প্রাচ্যকে' নিমিষেই 'পশ্চিম'বানানোর
অনৈতিক অপচেষ্টায় নিরন্তর লিপ্ত তারাই,
বাঙালির নিষ্কলুষ ভূমিতে,
আগাছা নারী বক্ষ উন্মোচিত করে,
অথবা চামড়ার সাথে লেপ্টে থাকা চিনচিনে পোশাক দেখিয়ে
হেঁটে বেড়ায় অবাঙাল সেজে।

পড়ে থাকে বাঙালিত্ব ;একটি শাশ্বত জাতিসত্ত্বা....
নারীর শরীর পিপাসু বিকৃত মস্তিষ্কের পুরুষ ঘুরবে উত্‍সবে
অথবা নিজেরা করবে উত্‍সব;
যেখানে পশ্চিমা ধাঁচের শরীর প্রদর্শনী
চিরন্তন সতী-সাধ্বীকে জীবন্ত কবর দেয়,
সময়ের আবর্তনে'একটি দিনের'প্রত্যাশায়
'সংকর জাত'
নিরলস অপেক্ষা করে
জরি মাখানো 'নাভীনির্ভর শাড়ি'পরে
ঝুলে পড়া মাংশল পেটি দেখিয়ে
নগ্নপিপাসু পিশাচদের আকাঙ্খা মেটাতে,
তা দেখে বাঙালি নারী বরের সম্মুখেই আঁচলে মুখ ঢাকে-
অকৃত্রিম লজ্জায়....
অথবা কোন খ্যাত সুগন্ধি মেখে
কর্পোরেটদের সৌজন্যে একটি
'বাংলা রেঁস্তোরা' খোলা হয়
যেন বাঙালির ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব আজ এসে পড়েছে
বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপরে-
তারা সে দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে"চলে যাচ্ছে''!
অথবা জিন্স প্যান্ট আর টাইট স্কার্ট পরে
বিকৃত করে কোমর দুলিয়ে
যে নারী বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যকে পশ্চাতদেশ দেখায়
এবং
যে নারী অথবা পুরুষ সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকারীর
নিম্নমানের ভাষার গান শোনে ও কথা বলে-
তারাই বৈশাখের ঝান্ডা হাতে
'এসো হে বৈশাখ 'বলে,
তখন কাঁদে,বাঙালি কাঁদে !!!

অথবা বৈশাখী হাওয়ায় জাটকার সাথে
গরম পানিতে প্রক্রিয়াজাত পান্তা খেয়ে,
রংচং আর মুখোশ পরে
তারা বাঙালি হয় কিছুক্ষণের জন্য।
তারপর আগের পোশাকে,ধ্যানে আর আচরণে
ফিরে যায় নষ্টামিতে-
খ্রিষ্টাব্দের কোন এক থার্টি ফার্স্ট নাইটে।


কিছু 'ক্ষ্যাত' তখনো পড়ে থাকে
ক্ষেতে-
একগুচ্ছ কলমি-লতা-হাতে
পাশে বিশাল বাঁশঝাড়;
কিছু বক আর শালিক উড়ে যায়;
কাদায় মাখামাখি করে 'মাটির মানুষ'হয় আবার মাটি;
নিশ্ছিদ্র ঘোমটা দিয়ে
বউ ঘাটে পানি নিতে আসে;
এক ফেরিওয়ালা 'চুড়ি ফিতা'বলে হাঁক দেয়;
গরু নিয়ে রাখাল চরের দিকে ছোটে;
বার্ধক্য বৃদ্ধ দাদুকে ওযূ করা থেকে বিরত রাখেনা;
ও পাড়ার হরীদা স্বরসতীর নিমন্ত্রণ জানায়;
ফাঁকা মাঠে হাডুডু,কানামাছি অথবা এঁড়ের লড়াই চলে;
হিজল ফুলের রক্তাক্ত মালা গেঁথে বসে থাকে কিশোরী;
খেজুর রসে ভেজা চিতই অথবা কাঁচা রস,শীতের কুয়াশায়
মায়ের হাতের কয়েকটি পিঠা অথবা একমুঠো ভাজা ভাত;
কাঁখে ধামা রেখে শস্য বুনে কিষাণ,
নবান্নের উত্‍সবে নতুন ধানের গন্ধে,
ভাত আর পিঠায় ছেঁয়ে যায় চারপাশ-
পাড়ায় পাড়ায় ধুম পড়ে
প্রতিবেশির খোঁজে,
রাতের লাঠিখেলা ও হাসিঠাট্রা চিরায়ত বাংলার রূপ;ফুটিয়ে তোলে
স্বপ্ন,বাস্তব,কান্না,আনন্দ আর অভিলাষ
:মনে-প্রাণে একটাই বিশ্বাস:
আমরা বাংলাদেশী, আমরাই বাঙগালি।

১৩ এপ্রিল, ২০১৪।
পাঠ অনুভূতি