সর্বশেষ

কেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে সক্রিয় ও আগ্রহী?


তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেজেব তায়িব এরদোয়ান কাতার সংকট বিষয়ে আলাপ করতে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছে। সৌদি বাদশাহ সালমান, তার পাগলাটে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান, কুয়েতের আমীর এবং সর্বশেষ কাতারের আমীর তামিমের সাথে মিমাংসার জন্য আলাপ করেছে এরদোয়ান।(ভিডিও: ইভটিজিং করা ছেলেটির বোনকে একদিন অন্য ইভটিজার টিজ করলো) এই আলোচনায় যদি সে সফল হয় তবে তুরস্ক’র রাজনৈতিক অবস্থান আরো শক্তিশালী হবে। এমনিতেই পুরো ইউরোপ এরদোয়ানের তুরস্ক’র ব্যাপারে আতঙ্কগ্রস্ত। তারমধ্যে ইইউ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দাসপ্রতীম মিত্র সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশরের সঙ্গে কাতারের সংকট যদি তুর্কি এই জনপ্রিয় নেতার মধ্যস্থতায় অবসান হয় তবে সমগ্র বিশ্বের জন্য তা এক নতুন বার্তা আসবে।(VIDEO: সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের মিডিয়ায় অপ্রকাশিত রূপ! একবার দেখে বেড়াতে যাইয়েন।) সেটি হচ্ছে, তুর্কিরা যে নয়া ওসমানীয় সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখে তা পুরোপুরি বাস্তব না হলেও তার বুদ্ধিবৃত্তিক অস্তিত্ত্ব নির্মাণ শুরু হয়েছে। তুর্কিরা মনে করে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমারা তাদের ওসমানীয় সাম্রাজ্য বিভক্ত করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। এতদিন ধরে তারা অপেক্ষায় ছিল কবে অর্থনৈতিকভাবে, সামরিকভাবে শক্তিশালী হয়ে তারা এসব আলোচনাকে সামনে নিয়ে আসে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যই সর্বশেষ ঐতিহাসিক দলিলে তুর্কি সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। আবার ইউরোপের বড় একটা অংশ, এমন কি ইউরোপীয় সভ্যতার অন্যতম ধারক গ্রীসও ছিল ওসমানীয় সাম্রাজ্যের ক্ষুদ্র একটি রাজ্য।(VIDEO: শাকিব খানকে মুখের উপর বেয়াদব বলছেন নায়ক আলমগীর) এ কারণে পূর্বুপুরুষদের তুর্কি অধীনতা মেনে নেয়ায় বর্তমান ইউরোপীয় ও আমেরিকানদের মধ্যে এক ধরনের তুর্কি বা তুরস্ক আতঙ্ক আছে। ওদের বদ্ধমূল ধারণা যে তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিলে সমগ্র ইউরোপ তুর্কিরা দখল করে নেবে। গুগলে বা ইউটিউবে #NeoOttomanEmpire সম্পৃক্ত যত লেখা, প্রামাণ্য বা ভিডিও পাবেন তার প্রায় ৯০ শতাংশ তৈরি করেছে ্ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা। এর কারণ কি? (আসলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে সব লেখা যায়না। শব্দ লিখতে হাত ব্যথা করে। তুর্কি ওসমানীয় খেলাফতি সাম্রাজ্য রাশিয়ার কাছ থেকে ককেসাসকে পৃথক করেছে, ইউরোপ থেকে বলকানকে পৃথক করেছে, পারস্য সাম্রাজ্যকে তুর্কি সাম্রাজ্যে নিয়ে আসছে, রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্তানতিপল বিজয় করে নাম দিয়ে ইস্তানবুল, ১২০৩ সালে বাংলার সেন সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে আরো কত কি! রাশিয়ানা, ব্রিটিশ, ফরাসী সকল সাম্রাজ্যকে চ্যালেঞ্জ করেছিল এই ওসমানীয় সাম্রাজ্য। সে কারণেই নব্য ওসমানীয় সাম্রাজ্য ভয়ের কারণ! ফের যদি তুর্ক পুনর্জাগরণ হয়? যদি ফের সকল মুসলমানদের তুর্কিরা এক করে ফেলে? শিয়া ও সুন্নী দ্বন্দ্ব বাধিয়ে তো তবে ইহুদীরা লাভ পাবেনা। সন্ত্রাসী  ইহুদীবাদী আইএস দিয়ে তো তখন মুসলমানদের রক্তপাত করতে পারবেনা। সে কারণেই এরদোয়ানকে ভয় পায়?)



২।
একটু ভাল করে তুর্কির আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ লক্ষ্য করবেন। মনে হবে এরা কোন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে।(VIDEO: উত্তেজনাকর এক হাডুডু ম্যাচ! বাংলার জাতীয় খেলা একেই বলে) মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে সরাসরি রাশিয়া ও আমেরিকাকে ফায়দা নিতে দেয়নি তুরস্ক। নিজে ইরাক-সিরিয়ার বিরাট অংশে সৈন্য সমাবেশ করেছে। ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছে। সৌদি আরবের সাথেও। দুনিয়ার যেকোন মুসলিম প্রধান দেশের অভ্যন্তরীণ তুর্কি সরকার অফিসিয়াল বক্তব্য প্রচার করে। এরদোয়ান নিজেও কথা বলেন। এর অর্থ হচ্ছে, এরদোয়ান ও তুর্কিরা নিজেদের মুসলিমদের কিছুটা হলেও অভিভাবক ভাবছে। সিরিয়া ও ইরাকের প্রায় ৩০ লাখ শরণার্থীকে ভরণপোষণ করছে।(ভিডিও: জাকির নায়েকের হুবহু কপি! কিয়ামতের আলামত!) বলকান রাষ্ট্রগুলোয় বিপুল অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা কিন্তু তরস্ককে ছুঁতে পারেনি। ফলে জি-২০ তে তুর্কিদের পদচারণা হয় গৌরবদীপ্ত উপায়ে। তুর্কি জনতা ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই পশ্চিমপন্থী সেনাবাহিনীর বিদ্রোহকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। তুরস্ক ফিলিস্তিনীদের অধিকারের ব্যাপারেও সরব। সবচেয়ে বড় কথা ইতিহাসের পাঠে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যই তুর্কি সাম্রাজ্যের ছোট ছোট প্রদেশ। ফলে কাতার সংকট যদি এরদোয়ানের মাধ্যমে কেটে যায় তাতে করে মধ্যপ্রাচ্যের অভিভাবক হিসেবে তুরস্ক আলোচনায় চলে আসবে। আমার মনে হয়, এ বিষয়টি ভেবেই এরদোয়ানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে ইহুদীবান্ধব সৌদি আরব। সুতরাং কাতার সংকটের সমাধান এত দ্রুত হচ্ছেনা। আর কাতার থেকে তুর্কিরাও সেনা ঘাঁটি সরাবেনা।
৩।
তবে তুর্কিরা যে নব্য ওসমানীয় সাম্রাজ্য চাচ্ছে তা যদি সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তবে সবচেয়ে আতঙ্কিত হবে সৌদি আরব সরকার। কারণ ওসমানীয় খিলাফাত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন ইহুদীবাদী ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখন এই সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আল সৌদি ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ওয়াহাবিবাদের জনক ওয়াহাবও তার বিভ্রান্ত মতাদর্শ নিয়ে তুর্কি খিলাফত ধ্বংসে লিপ্ত হয়। সে কারণে তুরস্কের মধ্যপ্রাচ্যে সরব উপস্থিতি সৌদি আরবের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।(ভিডিও: পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়!) কারণ এই তুরস্ক সামরিক দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী এবং মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বর লড়াইয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পাশাপাশি এরদোয়ানের তুর্কিও সমকক্ষ। এরদোয়ানি শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্বের মধ্যে যায়না। তার কথাবার্তা সব সময় ইরান তার ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র। কোন রাষ্ট্রনায়ক যখন তার আশেপাশের রাষ্ট্রগুলোকে সমকক্ষতার বাণী শুনিয়ে তাদের বিপদে পাশে দাঁড়াতে চায় তখন বুঝতে হবে ঐ রাষ্ট্রনায়ক আঞ্চলিক নেতৃত্ব্বে সকলের উপরে। এরদোয়ানের ক্ষেত্র্রেও তাই ঘটছে বলে আমার বিশ্বাস। সে ধীরে ধীরে নিজেকে মধ্যপ্রাচ্য তথা মুসলিম বিশ্বের অঘোষিত একজন নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছে। সে কারণে কাতারের বিপদে সবার আগে খাদ্য পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন সংকট কাটাতে আলাপ করছে।

৪।
এসব কিছু কি রজব তাইয়িব এরদোয়ানের বৈশ্বিক নেতৃত্ত্বের কেন্দ্র হয়ে উঠার চূড়ান্ত আভাস? যেহেতু এর আগে সে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় ২০২৪ পর্যন্ত নিজের জায়গা পাকাপক্ত করেছে। আবার বারবার সে বলে , জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ টি দেশের একটিও কোন মুসলিম রাষ্ট্র নেই। মুসলমানদের অধিকারের নিশ্চয়তা ও মুসলমানদের অধিকার আদায়ে জাতিসংঘ মুসলিম দেশের জন্য নিরাপত্তা পরিষদে তিনি স্থায়ী সদস্যপদের কথা বলেন। বড় সুদূরপ্রসারী চিন্তার এসব কথা।(VIDEO: যে কারণে আঁখি আলমগীরের শরীরে এত বিষ!) এ কারণেই পশ্চিমারা বিশেষ করে ইউরোপ এখনো এরদোয়ানকে তাদের ইউনিয়নে নিচ্ছেনা। বারবার কথা দিয়ে তা রাখছেনা। কারণ তারা তুরস্কে একটি দাস সরকার চাচ্ছে। কিন্তু এরদোয়ান দাসত্ব তো করেই না, বরং পুরোনো ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানের মত প্রবল পরাক্রম নিয়ে কথা বলে, অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিও বৃদ্ধি করছে। এসব বিষয় থেকে এটা বলা যায়, এরদোয়ানের তুরস্ক বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে পরাশক্তি হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। সে কারণেই কাতার সংকট কাটাতে এরদোেয়ানের আগমন পারস্য উপসাগরে। এবং তুর্কিদের আগমন আল সৌদসহ সকল পক্ষকে ভাবাচ্ছে...! কি চায় এরদোয়ান? হাজার কক্ষ বিশিষ্ট একটি সুরম্য প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ এই যুগে এসে কি কারণে নির্মাণ করলো তুরস্ক?
সময়ের দিকে চাইলেই আমরা উত্তর পাবো ইউরোপ ও এশিয়াকে সংযুক্তকরা তুরস্ক কেন ভূরাজনৈতিক কারণে এতটা দ্রৃত বৈশ্বিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে এবং এই প্রভাবের ঐতিহাসিক পরিণতি কি হয়...! সে পর্যন্ত আমরা ওসমানের বংশধর লাল পতাকাবাহীদের পর্যবেক্ষণ করতে পারি..! দেখা যাক কি হয়, কি করে তুরস্ক!

পাঠ অনুভূতি