রাশিয়াকে যখন বছর ছয়েক আগে আমাদের প্রিয় শিক্ষক শেখ আদনান ফাহাদ স্যার বলতেন ‘সুপারপাওয়ার’ এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করতে পুতিনের হাত ধরে নয়া রাশিয়ার উত্থান ঘটেছে, তখন অধিকাংশই তা মেনে নিতে পারেনি। বিবিসি, সিএনএন, প্রথম আলো, আনন্দবাজারি আমাদের মগজে এদের দেখানো পৃথিবী ছাড়া অন্য পৃথিবীর কোন জায়গা নেই। অথচ রাশিয়া কিন্তু মার্কিন একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে বসে আছে এবং জর্জিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আগ্রাসন চালিয়েছে, ইহুদীবাদি ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে যুক্ত করেছে।(ভিডিও: ইভটিজারের বোনকে দেখুন ইভটিজিং করছে অন্য ছেলেরা) আর পুতিনের হাতে সবচেয়ে বড় চপেটাঘাত মার্কিন প্রশাসন খেয়েছে সিরিয়ায়। বাশার আল আসাদকে শুধু রাশিয়া টিকে থাকতে সমর্থন করেই থেমে থাকেনি, সিরিয়ার লাতাকিয়াসহ কয়েকটি শহরে রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটি পর্যন্ত গেড়েছে। ইহুদীবাদী ওবামা ও সাইকো হিলারির জায়োনিস্ট আইএস প্রজেক্টকে সিরিয়া থেকে উৎখাত করেছে। পরিস্থিতি যখন সিআইএর প্লান মোতাবেক হচ্ছিলনা, কেবল তখনই মার্কিন সরকার সিরিয়া থেকে সন্ত্রাস নির্মূলে লোক দেখাতে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে। রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন করে। রাশিয়া বলছে তাদের বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক পারমাণবিক বোমা আছে। রাশিয়া তার জঙ্গীবিমান মার্কিন আলাস্কা রাজ্যের উপর দিয়ে উড়িয়ে ম নে করিয়ে দেয় যে, আলাস্কা একদা রাশিয়ার ছিল এবং তা রাশিয়াকে বেকায়দায় ফেলে লুটে নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণে পুতিনের এই আগ্রাসী রাশিয়ার সামনে ট্রাম্প কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টিকতে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়ায় নয় শুধু, সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আইকনিক লিডার হিসেবে পরিচিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিনের। সর্বশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অর্থনৈতিক অবরোধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেদেশ থেকে ৭৫৫ জন মার্কিন কূটনীতি বিষয়ক কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৩১ জুলাই, ২০১৭। এমন চপেটাঘাত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেশ বিপদগ্রস্ত করবে। মার্কিন প্রশাসনকে পুতিনের নেতৃত্বের সামনে করবে আরো নাজুক।
এখন রাশিয়ার যে বৈশ্বিক অবস্থান তাতে মার্কিন যু ক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য এ পৃথিবীতে নেই এটা পরিষ্কার। কারণ রাশিয়ার সাথে সাথে চীন, ভারত, তুরস্ক ও ইরানেরও উত্থান ঘটেছে। সে করে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, বিগত প্রায় ১০ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীতে আর একক কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। এর মধ্যে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার পর তো ১৯৪৫ সালের পর সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণের হুমকি দেয়া কোন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। গতকাল ২৯ জুলাই ২০১৭ তেও উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় এবং কিম জং উন ঘোষণা করেন যে, ‘এ ক্ষেপণাস্ত্র আমেরিকার যেকোন স্থানে আক্রমণ করতে সক্ষম’। পরিস্থিতি এমন রয়েছে। এর অর্থ আমেরিকা আর সুপারপাওয়ারের একক ভূমিকা পালন করছেনা। এর অর্থ বিশ্বের ক্ষমতা এখন বিকেন্দ্রীক তথা ক্ষমতা ছড়িয়ে পড়েছে, কুক্ষীগত নেই। তথাপি ইহুদীবাদী ইসরাঈল যেহেতু ফেডারেল রিজার্ভ ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্ব ইলেকট্রনিক টাকার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে তাই বিশ্বে ইসরাঈলের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমন কি সাম্প্রর্দাকয়িকতার অভিযোগে সমালোচিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিছুদিন আগে অবৈধ ইসরাঈলে সফরে গিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে চুক্তি করে এসেছে।
ফলে মার্কিন ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ মানেই কিন্তু অবৈধ ইসরাঈলের দুর্বল হয়ে যাওয়া নয়। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধের মধ্যে যুক্ত রাখে অবৈধ ইসরাঈল। এতে করে ইহুদীদের অস্ত্র ব্যবসা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি মার্কিন সরকারের নড়বড়ে অবস্থার সুযোগে আইপ্যাক-ইসরাঈলী আমেরিকান ইহুদী লবি ইহুদীদের স্বার্থে নানা চুক্তি ও সুবিধা আদায় করে। যেমন, সাইকোপ্যাথিক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দিয়ে ইরানের সাথে করা চুক্তিকে বাতিল করেছে।
ফলে মার্কিন ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ মানেই কিন্তু অবৈধ ইসরাঈলের দুর্বল হয়ে যাওয়া নয়। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধের মধ্যে যুক্ত রাখে অবৈধ ইসরাঈল। এতে করে ইহুদীদের অস্ত্র ব্যবসা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি মার্কিন সরকারের নড়বড়ে অবস্থার সুযোগে আইপ্যাক-ইসরাঈলী আমেরিকান ইহুদী লবি ইহুদীদের স্বার্থে নানা চুক্তি ও সুবিধা আদায় করে। যেমন, সাইকোপ্যাথিক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দিয়ে ইরানের সাথে করা চুক্তিকে বাতিল করেছে।
ফিরে আসি রাশিয়া ও পুতিনের কাছে। রাশিয়ার বর্তমান ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী এজেণ্ডার পাশাপাশি ধর্মীয়ভাবেও বিশ্বে সক্রিয় হচ্ছে যা বিশ্ব মিডিয়া আমাদের জানাবেনা। রাশিয়া যে খ্রীস্টান ধর্ম চর্চা হয় তাকে বলা হয় পূর্বাঞ্চলীয় অর্থডক্স খ্রীস্টান ধর্ম। এদের বিশ্বাস মুসলমানদের কাছাকাছি। এবং এরা মুসলমানদের মতই মনে করে যে, জেসাস তথা ইসা (আ) ফের পৃথিবীতে আসবেন এবং সমগ্র মানবজাতিকে ইহুদীবাদ ও এন্টিক্রাইস্ট তথা দাজ্জালের কবল থেকে মুক্ত করবেন। তিনি সকল ধর্মীয় বিভাজন, গোঁড়ামী ও অসসতা দূর করে সত্যিকার শান্তিবাদী ধর্ম ও ঈশ্বরের বাণী প্রচার করবেন। সে কারণে সিরিয়ায় যে রাশিয়া গিয়েছে এর কারণ রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি কাজ করেনি। যে কথা মিডিয়া আমাদের জানায়নি তা হলে রাশিয়ান অর্থডক্স চার্চের প্রধান ধর্মীয় নেতা প্যাট্রিয়াক কিরিল এক জরুরি ডিক্রি জারি করেছিল যে, সিরিয়ার অর্থডক্স খ্রীস্টানদের ইহুদীবাদী আইএস থেকে রক্ষা করতে রাশিয়ার সিরিয়া যাওয়া উচিত। সে কারণেই রাশিয়া পালমিরা মুক্ত করেছে রক্ত দিয়ে।প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ইমরান নজর হুসাইন বলেছেন, পবিত্র কোরআনের সুরা রুমে মুসলমানদের সঙ্গে যে রোমানদের ঐক্যবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে সেটিই হচ্ছে বর্তমান রাশিয়া, যদিও এ বক্তব্যর বিরোধীতাকারী এখনো পাওয়া যাচ্ছেনা।
শেষ করবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দিয়ে। রাশিয়া এখন এতই শক্তিশালী যে সে মার্কন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। এর স্পষ্ট অর্থ দাঁড়ায় রাশিয়া কিছুতেই আর মার্কিন দেশের চেয়ে উঁচু ছাড়া নিচুতে নেই। রাশিয়ান অর্থনীতি যদি এখন শক্ত হয়ে দাঁড়ায় তবেই রাশিয়া বিশ্বকে জানিয়ে দেবে যে, আমেরিকার মোড়লগিরি দিন শেষ। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচিত করতে পুতিন ও রাশিয়ার গোয়েন্দা ও হ্যাকাররা যদি ভূমিকা রাখে এবং সেই অভিযোগ যদি হিলারী ক্লিনটন ও ওবামা থেকে আসে এবং তা তদন্ত করতে গিয়ে যতি এফবিআই প্রধান পদত্যাগ করেন তবে বলতেই হয়, আমেরিকার একক মাতুব্বরির দিন শেষ। রাশিয়ার প্রবল শক্তিসম্পন্ন উপস্থিতি বিশ্ব ক্ষমতার ধারাক্রমকে আমূল পাল্টে দিয়েছে। এখন রাশিয়ার সাথে তুরস্ক ও ইরানের সম্পর্কটি যদি স্থায়ী আঁটসাঁট হয় তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর কখনোই সেখানে নাক গলানোর সুযোগ পাবেনা। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ স্পষ্ট অভ্যন্তরে মার্কিন নাক গলানো বন্ধ করে দিয়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও উত্তর কোরিয়াও মার্কিন আধিপত্য নেই। ভারত ও পাকিস্তান নিজেরাই সুপারপাওয়ারের দাবিদার। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জার্মানির হামবুর্গে অনুষ্ঠি জি-২০ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যে সরব ও ব্যক্তিত্ত্বসম্পন্ন উপস্থিতি এ বিশ্ব দেখেছে তার কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলে মলিন ও দুর্বল প্রতিচ্ছবি।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা বিভাগ কেজিবির এজেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত ধরে তাই যে রাশিয়ান ফেডারেশনের উত্থান ঘটেছে সেটি অচিরেই বিশ্ব থেকে মার্কিন প্রভাবকে শূন্য করে না দিলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস করবে। এখন বাকি রাশিয়ান রুবলকে ডলারের বিপরীতে উন্নত মান করা। ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দায়ও রাশিয়ায় কোন অভাব হয়নি এবং এ মন্দা তাকে ছুঁতে পারেনি, সে কারণেই রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে রাশিয়াকে অবদমনের শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সামরিক, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক ঐতিহাসিকভাবে এগিয়ে থাকা রাশিয়ার অর্থনীতিকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা আর কতদিন দাবায়ে রাখতে পারবে? এই দিনের উপর নির্ভর করছে দুনিয়ার উপর ইউরোপ ও আমেরিকার নিয়ন্ত্রণের ভবিষ্যৎ। পুতিনের জন্য কি তা অসম্ভব? মনে হয়না...!