সর্বশেষ

উত্তর কোরিয়া: ক্ষেপণাস্ত্র যেখানে ‘শান্তি সুরক্ষার অস্ত্র’, আমেরিকা সেখানে নমনীয়


কেন উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে সেটি কেবল বিবিসি, সিএনএন, প্রথম আলো, এপি, এএফপি ইত্যাদি এক ঘরানোর সংবাদমাধ্যম থেকে জানলে তো উত্তর কোরিয়াকে ‘অপরাধী রাষ্ট্র’ মনে হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ এসব সংবাদমাধ্যম সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের একপেশে বক্তব্য প্রচার করে থাকে, সংবাদ বস্তুনিষ্ঠ হয়না। কারণ তাতে উত্তর কোরিয়ান নেতৃত্ব বা জনগণের কোন বক্তব্য থাকেনা। তাই সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রজাতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রোগাণ্ডা চালিয়ে বেড়ায়।আমরা যাচাই না করে তা বিশ্বাস করি। আমরা মার্কিন ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিগুলোর সেখানে বুলি দিয়ে উত্তর কোরিয়াকে বিচার করি এবং বলি ‘কেন উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক (আসলে নিউক্লিয়ার বা হাইড্রোজেন ) বোমার পরীক্ষা চালায়’। কথা হচ্ছে, পারমাণবিক অস্ত্র যদি বিশ্বের জন্য হুমকি হয় তবে তা কেন শুধু বাছাই করা কয়েকটি দেশের থাকবে? কেন অবৈধ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাঈলের হাতে পারমাণবিক বোমার বিপুল মজুদ থাকার পরেও কথিত শান্তিবাদীরা চুপ করে থাকে? কেন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতা পশ্চিমা ও অন্যান্য পরাশক্তিদের চিন্তিত করে? যদি আমেরিকার, ব্রিটেনের, ফ্রান্সের, রাশিয়ার, চীনের,ভারতের বা পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা থাকতে পারে, তবে কেন উত্তর কোরিয়ার থাকলে তাদের আপত্তি? যদি না থাকে , তো কারো থাকবেনা। যদি থাকে তো কারো থাকবে আর কারো থাকবেনা, তা হবেনা তা হবেনা। কারণ যার পারমাণবিক বোমা নেই তার উপর যে সীমিত সংখ্যকের আছে তারা খবরদারি করে। এটি কোন সাম্যবাদী, শান্তিকামী পৃথিবীর কাঠামো হতে পারেনা। কেন নিরাপত্তা পরিষদে কেবল ৫ টি দেশই ব্রাহ্মণ্যবাদী সুবিধা পায়? ভেটো শক্তির চেয়ে অবিচার এই পৃথিবীতে আর কি আছে? তো সেসবে সমস্যা না হলে, একটি রাষ্ট্র তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যখন অস্ত্রের পরীক্ষা চালায় সেটি কেন অন্যদের চিন্তিত করে? পারমাণবিক শক্তিধর এলিট বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর বুঝি ক্ষমতার বাহাদুরি কমে যায় বা আরো একজনকে ভাগ দিতে হয়?
যে কথা বলছিলাম, সংবাদমাধ্যম এখন শুধু সংবাদমাধ্যম নেই। এর সঙ্গে রাজনীতি ও সমাজনীতি জড়িয়ে গেছে। বিশ্ব সংবাদপ্রবাহ পশ্চিম থেকে প্রাচ্যে আসে।বিশ্বের প্রভাবশালী সবকটি সংবাদ এজেন্সি (রয়টর্স= ব্রিটেন, এএফপি=ফ্রান্স, এপি=যুক্তরাষ্ট্র) যাদের হাতে রয়েছে তারা এই সংবাদ এজেন্সির মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক এজেণ্ডাকে বাস্তবায়িত করে। নিজেদের পররাষ্ট্রনীতিতে যাকে ভিলেন হিসেবে দেখা হয় পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে তাদেরকেও ভিলেন মনে হবে। আবার নিজেদের চোখে যে বন্ধু বা অনুগত পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম তাকে এমনভাবে তুলে ধরবে যেন, তার ইমেজ ইতিবাচক হয় । নিউজের এই রাজনৈতিক অর্থনীতি না বুঝলে এই প্রোপাগাণ্ডার যুগে যে কেউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের অঘোষিত সেবক বা দাস হয়ে যাবে। সে কারণে কেন কোরিয়া পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে, কেন তারা এই ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়ে আনন্দে উৎসব করে সেসব জানতে হবে। আর সেসব আপনাকে মার্কিন ও ইউরোপীয় গণমাধ্যম বা এসব মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে যারা সংবাদ তৈরি করে (যেমন প্রথম আলো, আনন্দবাজার ইত্যাদি) তারা কখনোই সত্য উপস্থাপন করবেনা, সত্যকে ওরা চেপে যাবে। সত্যকে খুঁজে বের করতে হবে আপনাকেই।

কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া তথা ডিপিআরকে তথা উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদসূত্র। এই সংবাদমাধ্যমে গত ২৯ জুলাই ২০১৭ সালে যে পরীক্ষা চালানো হয় সেই বিষয়ে ‘DPRK People Rejoice over Another Successful ICBM Test-fire’ শীর্ষক একটি সংবাদ করা হয়। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে সংবাদের ভেতরে গেলাম এবং অবাক হয়ে গেলাম তাদের শব্দ, ভাষা ও প্রয়োগ দেখে। তারা নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রকে বলছে ‘আগ্রাসী, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থেকে কোরিয়ান জাতির নিরাপত্তার হাতিয়ার’। এই যে তাদের দাবি, এই দাবির কথা কেন তথাকথিত মূলধারার মিডিয়ায় আসেনি? তারা তো কাউকে হত্যা করতে, নাগাসাকি বা হিরোশিমার মত গণহত্যা চালাতে বোমার পরীক্ষা চালাচ্ছেনা। তারা শত্রুদের হুমকি থেকে নিজেদের জাতীয় স্বত্মাকে টিকিয়ে রাখতেই এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়।এটি হোয়াসাং-১৪ (Hwasong-14) নামের এই জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের দ্বিতীয় পরীক্ষা। এই পরীক্ষার পর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন কেসিটিভিতে সেই পরিচিত মুখ রি চুন হি (Ri Chun Hee) ঘোষণা দেন যে, এই নয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র বহন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন স্থানে আঘাত হানতে পারে। এ ঘোষণায় ট্রাম্প প্রশাসন বিচলিত হয়েছে। তবে এটি যে নিছক কথার কথা নয় সেটি বুঝতে পেরে উত্তর কোরিয়ায় হামলার কথা বলতে সাহস পায়নি
আমরা ফিরে আসি কোরিয়ান নিউজ এজেন্সিতে। সংবাদে কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান একাডেমির একজন গবেষক কিম উ ছল (Kim Yu Chol) বলেন:
The successful ICBM test-fire is another great victory which dealt a heavy blow to the U.S. imperialists and its vassal forces keen on obliterating the DPRK's dignity and its right to existence.
কথাগুলো যেন একেকটি বোমা। এমন বোমাসদৃশ কথা বলতে হিম্মত লাগে। জাতীয়তাবোধ লাগে এবং অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার লাগে। কিমের বক্তব্যকে অনুবাদ করলে এমন দাঁড়ায়:
আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের এই সফল পরীক্ষা আরো একটি মহাবিজয় যা সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুগত শক্তিকে ভয়াবহ আঘাত করলো, যারা উত্তর কোরিয়ার মর্যাদাকে মুছে দিয়ে টিকে থাকার অধিকার ক্ষুণ্ন করতে চায়।
উত্তর কোরিয়ার জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক কিম জং উন
 তাঁর শব্দ চয়ন স্পষ্ট করেছে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে শত্রু বলেছে এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ আমেরিকাকে হুজুর হুজুর করতে থাকাদের ‘ভ্যাস্যাল ফোর্স’ মানে দাস বা অধীনে থাকা রাষ্ট্রশক্তি বলেছে। এটা যেন গোলা! অথচ পশ্চিমা মিডিয়া এই গোলা প্রকাশ করেনা। তারা করেনা বলে এদেশের অনুবাদ করা আন্তর্জাতিক সংবাদ করা সাংবাদিক নামের পশ্চিমা সেবকরাও করেনা। প্রাচ্যের একটি শক্তি উত্তর কোরিয়া , কোরিয়ান শ্রমিক দলের নেতৃত্বে বৃহত্তম সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করছে এই ঘটনার রাজনৈতিক ও ভৌগলিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝতে অক্ষম সংবাদকর্মীরা। তাই তারা উত্ত কোরীয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছাড়াই একটি অর্ধসত্য অথবা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে উত্তর কোরিয়াকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে। লজ্জার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের বামপন্থী নামে পরিচিতরাও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ‍ও পুঁজিবাদী শক্তির কথা ‍শুনে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলে তা বা কেউ বললেও তার প্রতিবাদ করেনা।এ কারণে আমি এদের বলি ক্যাপিট্যালিস্ট কমরেড। মানে পুঁজিবাদী বিপ্লবী, যারা সারা জীবন দুনিয়ার মজদুর এক হও বলে চিল্লিয়ে এসি রুমে বসে থাকে সাম্রাজ্যবাদীদের শ্যুট টাই পরে অথবা শেষ জীবনে সেই সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা বা ইউরোপের কোন দেশে গিয়ে থালাবাটি ধুয়ে বা রাস্তা বা গাড়ি পরিষ্কার করে জীবীকা নির্বাহ করে। তবে ব্যতিক্রম আছে, তবে তা কম। খুব কম।

ফিরে আসি কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সিতে। জো সান হিয়াং (Jo Son Hyang) নামের এক সাধারণ নাগরিক যিনি রাঙগাঙ নামের একটি কোরিয়ান ডিস্ট্রিক্টে বাস করেন তিনি আত্মবিশ্বানের সাথে বলেন, আমাদের রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং আমাদের সন্তানদের আনন্দময়তা হবে চিরন্তন, কারণ এর (উত্তর কোরিয়ার) রয়েছে শান্তি সুরক্ষার শক্তিশালী অস্ত্র (...with confidence that the future of the country is bright and the happiness of our children will be forever as it has a powerful sword for keeping peace.)।
এ বাক্যগুলো একজন সাধারণ মানুষ বলে এটা ভেবে আমি অবাক হয়েছি কারণ উত্তর কোরিয়ার অর্ধেক মানুষও যদি এমন হয় তবে পৃথিবীর যেকোন সাম্রাজ্যবাদী সামরিক শক্তির জন্য তা উদ্বেগের। কোরিয়ান নেতা কিম জং উন ঠিক এ কারণেই জনপ্রিয়, তার পিতা ও দাদার মত। কারণ উত্তর কোরিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দক্ষিন কোরিয়া ও জাপান সব সময় হুমকির উপর রাখতো। ১৯৫০ সালে যে কোরিয় যুদ্ধ হয়েছে সে যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়া-আমেরিকা উত্তর কোরিয়ার কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে হত্যা করে ( উত্তর কোরিয়ার মতে তা আরো অধিক)। তো এই শত্রুতা আজো রয়েছে এটা শুধু নয়, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে থাকতো যে কবে বুঝি ফের দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যখন উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জনের ঘোষণা দিলো তখনই এই আতঙ্কিত জনগণ তাকে স্বাগত জানালো।

এর মানে তারা এমন শক্তি অর্জন করলো যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আনবে এবং উত্তর কোরিয়ানদের শান্তিতে ঘুমাতে দেবে। মানে কেউ যদি উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণ করে, সে বৃহৎ রাষ্ট্র হলেও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তি তাকে সমশক্তি দিয়ে আক্রমণ ফিরিয়ে দিতে পারবে। সোজা কথায়, শত্রু পক্ষ যদি জানে প্রতিপক্ষের কাছে তার সমান ধ্বংস ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র আছে তবে সে আগবাড়িয়ে আক্রমণ করবেনা। এ কারণেই উত্তর কোরিয়ান এ নাগরিক পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রকে বলছেন ‘শান্তি সুরক্ষার অস্ত্র’। অর্থাৎ পারমাণবিক বোমাই পারে কেবল পারমাণবিক বোমা দিয়ে মাস্তানী করাকে প্রতিহত করতে। ভাল করে ভাবুন তো, বিষয়টি সত্য কি না...! আজ যদি ইরানী ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় মার্কিন সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ও নৌবহর না থাকতো তবে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো, অবৈধ ইসরাঈল ও তার আরব মেরুদণ্ডহীন মিত্ররা ইরানে আক্রমণ করতোনা? কেবলমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ার কারণে কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে আলাপ করতে আগ্রহী হয় ভারত। ভারতের পারমাণবিক বোমা থাকার কারণেই চীন অরণাচল প্রদেশ দখল করে নিতে পারেনা। রাশিয়ার পারমাণবিক বোমা আছে বলেই সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি হচ্ছেনা। তেমনি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক বোমা আছে বলেই কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন একচ্ছত্র সামরিক উপস্থিতি ও দাদাগিরি চলছেনা। এই সত্যটা ভাবার চিন্তাশক্তি পর্যন্ত পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম নষ্ট করে দিয়েছে। আপনার কাছে সিএনএন, ফক্স, বিবিসি, ডিডব্লিউ, এএফপি, রয়টার্সকে আসমানী বাণী হিসেবে প্রচার করা হলেও সেগুলো মূলত সিআইএ, মোসাদ, এম১৬ ইত্যাদি এর আন্তর্জাতিক প্রকল্পের ইনটেলেকচুয়াল পার্ট

আপনি বলতে পারেন, উত্তর কোরিয়া বারবার এসব করছে কেন? তার আন্তর্জাতিক শক্তির উপর আস্থা রাখা উচিত। কিম জং উনের পারমাণবিক শক্তিকে ত্যাগ করে পশ্চিমা মানদণ্ডের শান্তিবাদী হওয়া উচিত। আসলে উচিত কি? মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি ছিল লিবিয়া। মুয়াম্মার গাদ্দাফির লিবিয়া। এই লোকটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে, ইউরোপীয়ান আধিপত্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। সে ব্যাপক পরিমাণ (পশ্চিমা মিডিয়া যাকে বলে WMD-Weapons of Mass destruction এবং আমাদের পশ্চিমানুসারী মিডিয়া একে গণবিধ্বংসী লেখে, ভাবখানা এমন যেন, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইসরাঈলের হাতে থাকা পারমাণবিক অস্ত্র গণজীবনরোধী..:p) অস্ত্রপাতি নির্মাণ করেছিল জাতীয় নিরাপত্তার জন্য। আজকে যেমন কিম জং উনকে ডিকটেটর, খ্যাপাটে, পাগল ইত্যাদি বলা হচ্ছে মিডিয়ায়, গাদ্দাফিকেও ঠিক এসবই বলা হতো। তো সেই গাদ্দাফি এক সময় পশ্চিমাদের মিষ্টি কথায় সব অস্ত্র ধ্বংস করে ফেলে। তারপরের ঘটনা আপনি জানেন তো? ২০১১ সালে কথিতে আরব বসন্তের নামে NATO ও মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্র গাদ্দাফিকে হত্যা করে। গাদ্দাফির সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের কোন অস্ত্র ছিলনা। যদি গাদ্দাফির অস্ত্র থাকতো নিশ্চিত লিবিয়ায় হামলা হতোনা। একইভাবে যখনই কিম জং উনের উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ কর্মসূচি বাতিল করবে তখনই মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর খবরদারি শুরু হবে। হয়তো কিম জং উনেরও সাদ্দাম হোসেন কিংবা গাদ্দাফির পরিণতি বরণ করতে হবে এবং কোরিয়ানরা হবে লিবিয়া, ইরাকের হতভাগা জনগণ! সে ভুল উত্তর কোরিয়া করবেনা বলেই কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি সংবাদটি শেষ করেছে এই কয়েকটি বিধ্বংসী লাইন দিয়ে:
If the U.S. swishes its nuclear stick against the DPRK again, oblivious of the lesson of the history, it will meet only bitter punishment to be meted out by the latter's nuclear strategic force.

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এমন ক্লিয়ার কাট হুমকি দেয়ার কথাগুলো ওরা আপনাকে জানতে দেবেনা। ওরা আপনার মিডিয়া দিয়ে আপনার মাথায় নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করে রেখেছে। সেখানে উত্তর কোরিয়ার মেহনতি মানুষের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস স্থান পায়না। সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র দিয়েই সাম্রাজ্যবাদীদের পারমাণবিক অস্ত্রের দম্ভকে চ্যালেঞ্জ করার প্রতিবয়ান স্থান পায়না। কিন্তু আপনাকে দিন শেষে স্বীকার করতেই হয়, উত্তর কোরিয়ার হয়। ওরা পারে। এটাই শক্তি। এই শক্তিই মানুষের, ব্যক্তিত্বের, জাতীয়তার, নিরাপত্তার, পারস্পরিক সম্মান ও ভালবাসার। উত্তর কোরিয়ার সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চলমান বৈপ্লবিক অবস্থানের প্রতি সশ্রদ্ধ অভিবাদন। উত্তর কোরিয়ার প্রতিরোধ দুর্গ দীর্ঘজীবী হোক।
এরপরেও যদি সাম্রাজ্যবাদের সাংস্কৃতিক বাহক হলিউডের প্রোপাগাণ্ডা মুভি ডিকটেটর বা ইন্টারভিউ দেখে পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পতন চান তবে আপনার বিবেক লোপ পেয়েছে। আপনি মানসিকভাবে পশ্চিমের দাসে পরিণত হয়েছেন এবং প্রাচ্যের শক্তি ও ভোগলিক গুরুত্ব সম্পর্কে আপনার মগজে একফোঁটা ইতিবাচক ধারণা জন্ম নেয়নি বলেই আজ আপনি আপনার নায়ককে শত্রুর মিথ্যাচার শুনে খলনায়ক ভাবছেন। অথচ একবারও ভাবলেননা, ওদের প্রোপাগাণ্ডা যদি সত্য হতো তবে তো উত্তর কোরিয়ার মানুষ এখন না খেয়ে মরতো। ওরা কি বিশ্বায়ন নামের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী থেকে বেঁচে নেই? অবশ্যই আছে এবং খুব ভালভাবে আছে এবং আমাকে আপনাকে শিক্ষা দিচ্ছে যে, বিশ্বায়ন নামের সাম্রাজ্যবাদের শৃঙ্খল ভেঙেও এ পৃথিবীতে টিকে থাকা যায় এবং সেই টিকে থাকার মধ্যে রয়েছে প্রবল বীরত্ব এবং আত্মমর্যাদাবোধ।

মেরদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তর কোরিয়ান প্রতিটি নাগরিক ও উত্তর কোরিয়ার প্রতি তাই বিপ্লবী শুভেচ্ছা আরো একটি ‘শান্তি সুরক্ষার অস্ত্র’ এর সফল পরীক্ষা চালিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ভীত কাঁপিয়ে দেয়ার জন্য।

পাঠ অনুভূতি