যেকোনো ঘটনায় নারী যুক্ত থাকলে নারীকেই বড় দোষী ভাবা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের মনে এখনো শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি, কেতাবি শিক্ষায় এরা শিক্ষিত। এখনো সমাজে অপরাধের দায় নারীকেই দেয়ার চিন্তায় এরা যুক্ত।
সমাজে অর্থ ও ক্ষমতার বৈষম্য কীভাবে অন্যায়-অপরাধ-পাপকে সমাজে ছড়িয়ে দেয় বা টিকিয়ে রাখে এটি অনেকেই বোঝেনা। মুনিয়া নামের মেয়েটি বসুন্ধরার এমডির সঙ্গে একটি অসম সম্পর্কে যুক্ত ছিলো। এই সম্পর্কের দায় ৪২ বছরের অর্থবিত্তক্ষমতাশালী পেডোফাইল সায়েম সোবহান আনভীরের৷ কারণ, তার নিজের সংসার রয়েছে, সন্তান কিংস কলেজ লণ্ডনে পড়ছে আর রয়েছে ঘরে স্ত্রী!
অন্যদিকে মুনিয়ার বাবা-মা কেউ নেই। বোন বিবাহিত৷ এর মধ্যে পড়ে মাত্র ইন্টারমিডিয়েটে। মানে তার সিদ্ধান্তের পরিক্বতা নেই যা দিয়ে তাকে অপরাধী বলা যায়। আবার তার লিগ্যাল অভিভাবক মা, বাবাও নেই। যে বোন নুসরাত আছে তাকেও পুরোপুরি দোষ দেয়া যাবেনা, কারণ সমাজে কত বড় প্রভাবশালী অপরাধী এই পুঁজিপতি ভোগবাদী চক্র সেটি আমরা সবাই জানি। এ জন্যই কারো মধ্যে ন্যূনতম মানবিকতা বা বিবেকবোধ থাকলে সে এই আত্মহত্যা করা মেয়েটিকে দোষী ধরে সায়েমের পাপকে ঢাকার চেষ্টা করবেনা।
সায়েম উঁচু লোকদের সঙ্গ দেয়। তাদের অনেক টাকা, অনেক লিংক। এসব দিয়ে এর আগে তার আরেক খুনী ভাইকে পার করেছে। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিলোনা। এখন আছে। আপনারা নিজ নিজ জায়গা থেকে আওয়াজ তুলতে ভুল করবেন না। বাংলাদেশের সংবিধানে সবাই সমান।
বিদ্যমান সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোতে এমনিতেই সোবহান গং আইনকে কেয়ার করেনা। তারা সমাজের প্রথা, রীতিকেও কেয়ার করেনা। এই শ্রেণী বৈষম্যকে অধ্যয়ন করলেই আমরা অনুধাবন করবো কেন সায়েম সোবহান আনভীরকে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো আমাদের সবার উচিত। একই সঙ্গে মেয়েটিকে নিয়ে অহেতুক রসালো আলাপ, সংবাদ বা স্ট্যাটাসও কীভাবে খুনী আনভীরকেই দীর্ঘমেয়াদী উপকার করবে সেটি খোঁজা উচিত আমাদের।
আমাদের সাংবাদিকদের উচিত ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে 'সায়েম ধরা খেয়ে মেয়েটিকে বাঁশ দিতে চাচ্ছে, একের পর এক লিংক দিচ্ছে' বলা 'ধরা', 'বাঁশ' ও 'লিংক' এর অনুসন্ধান করা। সেটি করতে দেরি হলে খুনীরা আলামত গায়েব করে দিতে চেষ্টা করতে পারব।
মুনিয়ার খুনী হিসেবে সায়েম সোবহানের পাশাপাশি এদেশের মুখে কুলুপ আঁটা নির্লজ্জ মিডিয়াও দায়ি। কীভাবে? সায়েম দেশ ছেড়ে পালিয়েছে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বলে টিবিএসসহ কয়েকটি মিডিয়া বিমান কর্মচারী ও পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে। আর বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর নিজেই সেই 'চিনি বাবা খুনী' এই কথা মিডিয়া প্রকাশ করেছে পরদিন দুপুরে। প্রথম আলো প্রকাশ করে ১২ টা ৪৫-এ। আর বেশিরভাগ গণমাধ্যম 'এক ছেলে', 'এক ব্যবসায়ী ', 'এক শিল্পপতি'---এসব আলতু ফালতু কথা লিখে পরোক্ষ খুনীকে আড়াল করে। ফলে সহজেই হয়তো পালিয়ে যেতে পারে খুনী। মিডিয়া গতকালই যদি ফলাও করে এ ঘটনা প্রকাশ করতো, তবে খুনী দেশ ছাড়ার সুযোগ একদমই পেতোনা! এখানেই মিডিয়ার দায়। ইস্ট ওয়েস্ট মিড়িয়া গ্রুপের এলসেসিয়ানগুলোতে এ ঘটনা এখনো গুম করে রেখেছে, মেয়েটিকে অপরাধী বানাতে হয়তো গালগল্প জমা করছে!
তবে দেশ ছাড়লেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে একে ফিরিয়ে আনতে পারবে। ও যাবে কোন দেশে? একে তো ওয়ারেন্টভুক্ত খুনী, আবার এই করোনা পরিস্থিতি। এত অল্প সময়ে পৃথিবীর উন্নত দেশ বলে পরিচিত রাষ্ট্রে ওর জায়গা পাওয়া কঠিন। আর এখানে যেতে হলে করোনা মুক্ত সার্টিফিকেট দরকার। কে দিলো ওকে? কোথায় গিয়েছে সেখান থেকে ধরে এনে এর বিচার করা গেলে এই করোনার মধ্যেও মানুষ একটি স্বস্তি পেতো।
এসব বিবেকসম্পন্ন মানুষকে ভাবতে হবে।
পশ্চিমা পৃথিবী কেন আমাদের চেয়ে এগিয়ে জানেন? এরকম সংবেদনশীল বিষয়ে ওরা নারী ও তার পরিবারকে সংরক্ষণ করে অপরাধী সায়েম আনভীরকে গ্রেফতার করার দাবি জানাতো। আমাদের অধিকাংশ অশিক্ষিতমানস ঠিক তার বিপরীত! যেন ঐ মেয়েই পাপী আর উনারা সবাই ফেরেশতাকুল সর্দার!
নারী মায়ের জাত। সভ্যতার কারিগর ও বিস্তারে সবচেয়ে কঠিন ভূমিকা পালনকারী। যেখানে নারীরা অনিরাপদ থাকে ও অসম্মানিত হয় সেই সমাজ এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়। অন্যের মা ও বোনকে নিজের মা ও বোন হিসেবে ভেবে যেকোনো ঘটনাকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখলে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ দেখতে পাবে---এরা অধিকাংশই আদিম যুগের বর্বরদের চেয়েও অশিক্ষিত ধারণা পোষণ করে নারীদের ব্যাপারে। অথচ ঘরে ফিরে নিজ নিজ মা, বোন, কন্যার কাছে একেকজন ফেরেশতা---ঠিক যেন বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর একেকটা!
এদের মানুষ কর, মাবূদ!
অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের পর মুনিয়ার পরোক্ষ খুনী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
0 Comments