সর্বশেষ

বিল গেটস ও মেলিন্ডার তালাক/ছাড়াছাড়ি/ডিভোর্স : টাকায় সুখ নেই, সুখ শান্তি কীসে?

বিল গেটস ও মেলিন্ডার তালাক ও কিছু আলাপ
~~~
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরও সুখ নেই। যা মানুষ প্রকাশ করে তা কেবল দুঃখ ঢেকে রাখা আনন্দের অংশ, অনেক সময় লোকদেখানো অভিনয়ের হাসিমুখ। টাকা মানুষকে সুখ দিলে বিল গেটস আর মেলিন্ডা গেটসের ২৭ বছর পরে তালাকের প্রস্তুতি নিতে হয়না। 

এ কারণে, আপনি যে অবস্থায় আছেন সেটিকেই সর্বোত্তম ধরে নিয়ে জীবনকে উপভোগ করুন। অন্যের জীবন দেখে হা-হুতাশ করে নিজের চলমান জীবনের সুখ বিসর্জন দিয়ে দুঃখকে বাড়াবেননা। আপনার সুখ আপনার মনের মধ্যে। আপনার মানসিক তৃপ্তি যদি টিনের এক চালা ঘরে সেরেজ গাছের চৌকিতে খেজুর পাতার পাটিতে বসে আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খাওয়া হয় তবে ওটাই শান্তি। শুধু অট্টালিকা, বিল্ডিং বানালে, ফ্লাট, গাড়ি, জায়গা জমি কিনলে বা নানা দিকে টাকার গাছ লাগালে জীবনে সুখ আসবে এর কোনোই গ্যারান্টি নেই।

তাই স্বল্পে সন্তুষ্ট হয়ে যা আছে নিজের তারই শতভাগ থেকে সুখ নিংড়ে বের করতে হবে। যা আছে তাতেই খুশি এবং অল্পে তুষ্টি---এটাই সুখী হওয়ার একমাত্র টেকসই আদি ও খাঁটি পদ্ধতি। 

মেলিন্দা গেটসের তো কলিজা আছে খারাপ লাগলে বিলাসীজীবন ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে, কিংবা গেটসেরও স্ত্রীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা আছে---যে স্ত্রী একদা ছিলেন তারই কোম্পানির প্রোডাক্ট ম্যানেজার। আমাদের দেশের অনেক নারীই স্বামীর অত্যাচার, মানসিক নিপীড়ন, আধিপত্যকে মেনে নিয়ে একেবারে দাসী হয়ে অসহায় যাপন করে। এর থেকে মেলিন্দারা উত্তম যে, তারা তাদের ভালো লাগা বা মন্দ লাগাকে মুখের উপর বলে দেয়। আর বাংলাদেশের ধনী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর এর লাম্পট্য, পরকীয়ায় এক মেয়ে পরোক্ষভাবে 'খুন' হলেও তার স্ত্রীর লম্পট স্বামীকে তালাক দেয়ার আত্মমর্যাদাবোধ বা হিম্মত নেই। কেবল মাত্র চুক্তি করে প্রথম স্ত্রীর নাম আমেনা তৈয়বা লিখে ঝর্না নামের মেয়েকে নিয়ে হোটেলে ধরা খেলেও আমেনা তৈয়বারা মামূনুলদের তালাক দেয়ার হিম্মত দেখাতে পারেনা। এই দিক থেকে পশ্চিমের নারীরা আমাদের অনেক ধনকুবেরের অথর্ব স্ত্রীদের চেয়ে নারী স্বাধীনতায় উত্তম।

আবার, স্ত্রীর দুর্ব্যবহার, অবহেলা ইত্যাদির পরেও অনেক স্বামী স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসা বা সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে, চড়া দেনমোহর দেয়ার ভয়ে বা সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে তালাকের কথা মুখে না এনে অশান্তিতে সংসার করে যায়। এই পীড়াদায়ক অবস্থার চেয়ে বিল-মেলিন্দার মত বিচ্ছেদও উত্তম।

আমেরিকায় বিয়ের প্রতি অনীহ কেন থাকে ছেলে বা মেয়ে, বিশেষ করে ছেলেরা? কারণ, সেখানে ভোগবাদী জীবন। ব্যভিচার, পরকীয়া স্বাভাবিক। একটা দুইটা কথার অমিল হলেই 'ব্রেকাপ'। নতুন সঙ্গী। সঙ্গী পাওয়াও সহজ। 

এজন্যই সেদেশে হাঁটু গেড়ে ছেলেটি আংটি বা ফুল নিয়ে 'Will you marry me?' বলা অত্যন্ত সাহসী, গুরুত্বপূর্ণ কর্ম। কারণ, বিয়ের পরদিন থেকে স্বামী ও স্ত্রীর সকল উপার্জন যৌথ উপার্জন বলে পরিগণিত হবে। বিচ্ছেদের সময় অর্জিত সম্পত্তি সমানভাবে ভাগ হবে। এই জন্যই পশ্চিমা দেশের মেয়েরা 'উইল ইউ ম্যারি মি' শুনলে আনন্দে কাঁদে---যে তাদের ছেলেরা বিশ্বাস করেছে, এককভাবে তাদের ভালোবাসাকে গ্রহণ করেছে এবং পুরো জীবন একসঙ্গে উপভোগের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

অবশ্য, বাংলাদেশে যারা এই 'ম্যারি মি' সংস্কৃতির ধারক-বাহক এরা পশ্চিমের ঠিক বিপরীত। এরা অনেকেই বিয়ে করে অর্থবিত্ত বা রূপ-যৌবন দেখে---যা আসলে ক্ষণস্থায়ী। ফলে তীব্র আবেগ বা মোহ কেটে যেতে সময় বেশি লাগেনা। মানসিক প্রশান্তি বা মনের মিল না দেখে, সত্যিকার ভালোবাসা ও পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসের দায়বদ্ধতা ভুলে চাকচিক্যময় অর্থ বা রূপনির্ভর প্রেম, ভালোবাসা বা বিয়ে ভেঙে যেতে সময় নেয়না।

তাই ভালোবাসুন ভীষণ ভালো করে। যদি বোঝেন কেউ আপনাকে ভালোবাসে জীবনের মত বা তার চেয়ে অধিক তবে সেখানে 'কিন্তু, খুঁত, সংশয়' নিয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে জটিলতা বৃদ্ধি করবেন না। 

যাকে চান, তাকেই চান। যে আপনাকে চায় আপনারই মত বা আপনার চেয়ে বেশি করে তার সঙ্গে ঘর বাঁধতে দ্বিধান্বিত হওয়া উচিত নয়। এতে সময় চলে গেলে পস্তাতে হয়, বুকের মধ্যে জমে এক বুক অপ্রাপ্তি আর দীর্ঘশ্বাস। এ দীর্ঘশ্বাস থেকে মুক্তির জন্য আপনার একজন উত্তম জীবনসঙ্গী বা সঙ্গীনীর নিশ্চয়ই প্রয়োজন। কিন্তু যাকে আপনি জীবনের জন্য অবশ্যপ্রয়োজন ভাবছেন তার জীবনের অবশ্যপ্রয়োজন আপনি কী না এটা জেনে সামনে আগাচ্ছেন তো?
পাঠ অনুভূতি

Post a Comment

0 Comments