প্রশ্ন হচ্ছে 'সংবাদ' কি শুধু সংবাদ?না,সংবাদ একেকটি গোষ্ঠীর স্বার্থের সুশীল রূপ।একেকটি সংবাদ সংবাদ হওয়ার পিছনে রয়েছে নানা রাজনীতি।একটি শিরোনাম দেয়ার আগে প্রতিবেদক ও সহসম্পাদক এর প্রভাব কতটুকু তা নিয়ে ভাবেন।পাঠক এটি পড়ে কি প্রতিক্রিয়া দেবে তা ভাবেন।সংবাদ দিয়ে নিজস্ব এজেন্ডা পূরণ করতে চায় বৃহত্ শক্তি।এজেন্সিগুলোর কাছে সংবাদ পুরোপুরি পণ্য।টিভি চ্যানেলের সংবাদ সাইলেন্ট প্রোপাগান্ডা।
২।
পশ্চিমা মিডিয়ায় যা দেখি তা আসলে পশ্চিমা সরকারগুলোর সুবিধাজনক নীতির প্রতিফলন।কঠিন ফিল্টারিং ছাড়া BBC,CNN,RT তে কিছুই আসেনা।হিসাব নিকাশ করে পক্ষে আসবে এমন শব্দই ব্যবহার করবে পশ্চিমা গণমাধ্যম।সেই মিডিয়ায় বর্বর ড্রোন হামলায় বেসামরিক লোক নিহত হওয়াকে ঢাকতে 'সন্দেহভাজন জঙ্গী'শব্দ ব্যবহার করা হয়।প্রতিরোধ যোদ্ধাদের স্থানীয়রা যে নামেই ডাকুক রয়টার্স,এএফপি বা এপি তাদের সন্ত্রাসী বা টেররিস্ট নামে প্রচার করবে এবং এজেন্ডা সেট করে ওদের শত্রুকে সারা পৃথিবীর শত্রু হিসেবে প্রমাণ করবে।ওয়ার অন টেররিজম প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সবচেয়ে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে মার্কিন ও পশ্চিমা মিডিয়া।শতাব্দীর সেরা নাটক ৯/১১ এর কাঁধে বন্দুক রেখে প্রোপাগান্ডায় এ বিশ্বকে প্লাবিত করেছে আমেরিকা ও ইউরোপ।সংবাদকে করেছে সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদীদের এলসেসিয়ান।
৩।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের স্কেল দিয়ে এ জগত পরিমাপ করলে আপনি জগতের অল্প একটি অংশ দেখবেন।সেই অংশ কেবল পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোগবাদী ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট।আপনি সাম্যবাদী ল্যাটিন আমেরিকাকে দেখবেন না,দেখলেও মাদকের স্বর্গ হিসেবে।ধনাঢ্য আরবদের দেখাবে পশ্চিমাগামী।প্রাচ্যকে দেখাবে দারিদ্রকবল।সংষ্কৃতির বরপুত্র ও সরলদের আবাস্থল আফ্রিকাকে দেখাবে বর্বর ও কলহপ্রবণ।দেখাবে মহাকাশে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য।তাদের চ্যানেল ও পত্রিকায় মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত,চীনের বিদ্রোহ,আফ্রিকার অভ্যত্থান,দূরপ্রাচ্যের বাকবিতন্ডা,ইরানের পরমাণু ইস্যুতে ভরা দেখবেন।কখনো বাল্টিমোরের কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা নিয়ে ফলোআপ দেখবেননা,টেনেসিতে এক হোয়াইট সুপ্রিমেসিপন্থী মৌলবাদী খ্রীস্টান কর্তৃক দুই ইহুদীকে আমেরিকার জঞ্জাল উপাধী দিয়ে হত্যা করা সংবাদ দেখবেননা।
৪।
কারণ ওরা সংবাদের প্রভাব জানে।আপনি আমি যেভাবে অন্ধভাবে আমেরিকা ও পশ্চিমের ছুঁড়ে দেয়া তথ্য গলধঃকরণ করি ওরা সেভাবে সংবাদকে নেয়না।ওরা সংবাদ দিয়ে আপনার মনোজগতে উপনিবেশ তৈরি করে।কারণ ওরা জানে-
Information Is Power
এই পাওয়ারটাকে বিকৃত বা অসত্য বা মিথ্যা আকারে আপনার মগজে দিতে পারলেই প্রতিযোগিতায় আপনি পিছে পড়ে গেলেন।পলিসি মেকিংয়ে আপনি তখন বাধ্য হবেন পশ্চিম বা আমেরিকার কাছে নতি স্বীকার করতে।সেটিই হচ্ছে।পুরো পৃথিবীকে বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্ত্বর দিকে ঠেলে দিয়ে স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইউরোপ ও আমেরিকা তাদের চিন্তা ও কর্মকে বিশ্বজনীন বলে উপস্থাপন করছে।প্রোপাগান্ডার বিষে আমরাও তা গ্রহণ করছি।সংবাদ হিসেবে আসা একেকটি বুলেটে চিন্তার শক্তি ধ্বসে যাচ্ছে এবং অবনত মস্তকে হীনমন্যতায় ভুগছি আমি,তুমি,আপনি,সে -আমরা।
৫।
আমাদের প্রত্যেকের মাথা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দাসত্ত্বের একেকটি বৃত্তাকার বাক্স।আমাদের নিজস্ব চিন্তার ক্ষমতা ওরা নষ্ট করে দিয়েছে।আমাদের স্বাধীন চিন্তাকে এজেন্ডা সেট করে নিয়ন্ত্রণ করছে।পত্রিকা ও টিভিতে আলোচনার উপাদান দিয়ে দিচ্ছে ওরা।সেটি নিয়ে মেতে আছি আমরা।অনলাইন,টিভি ও পত্রিকার বাইরের পৃথিবী আমাদের কাছে অজানা।আমরা পশ্চিমা মিডিয়ার হ্যাশট্যাগের গাঢ় রঙে বন্দি।এ বন্দিত্ত্ব সংবাদের উপর অন্ধ বিশ্বাসের ফল।ক্রশচেকবিহীন সংবাদগ্রহণ ও তার চর্চা কার্যত একটি পক্ষপাতদুষ্ট মানসিক দাস ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটিয়েছে।প্রোপাগান্ডা ভিত্তিক সংবাদের দাসত্ত্ব মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষতিকর দাসপ্রথা।কারণ এই দাসরা জানেই না এরা দাস,এরা দাসত্ত্বের মাধ্যমে অন্যের নীতিকে অন্ধভাবে অনুসরণই করছেনা,সেই নীতির প্রচার ও প্রতিরোধও করছে।সংবাদভিত্তিক দাসপ্রথার বিলুপ্তি না হলে পুরো পৃথিবীটা অসত্য ও দ্ধন্দ্বে পূর্ণ হবে।প্রত্যেক সংবাদমাধ্যমের দাস অপর সংবাদমাধ্যমের দাসকে ভুল ও বিভ্রান্তের অনুসারী বলবে এবং একে অপরের উপর নিজস্ব মনিবের পলিসি প্রয়োগের চেষ্টা করবে।এই পরিস্থিতি রক্তারক্তির উদ্ভব ঘটাতে পারে।ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ার ইস্যুতে RT বনাম BBC,CNN এর প্রভাব আমরা দেখেছি।PressTv বনাম Vice News,NBC,FOX এর দ্বন্দ্বও চলছে।তুরস্কের Anadolu বনাম ইরানের IRIB এর অনুসারী দাসদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব চলছে।Xinhuya ও CCTV এর সাথে NDTV,CNN,BBC এর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য।
৬।
এসব চলছে,চলবে যতদিন সংবাদমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীন না হবে।আর সংবাদমাধ্যম স্বাধীন হওয়া অসম্ভব।প্রতিটি সংবাদমাধ্যমের কর্ণধার কোন না কোন পলিসি ধারন করে এবং তারা সেটি প্রয়োগও করেন সংবাদমাধ্যমে।নিজস্ব পাঠক শ্রেণী মানে নিজস্ব দাসশ্রেণী।কঠিন মনে হলেও এটিই সত্য।একটি উদাহরণ দিই।বাংলাদেশে প্রথম আলো নামের একটি পত্রিকার নিয়মিত কিছু পাঠকদের সঙ্গে কথা বলুন।দেখবেন এরা প্রথম আলো ছাড়া অন্য কোন তথ্য নিচ্ছেনা।এদের সব আস্থা ও বিশ্বাস প্রথম আলোর প্রতি।ফলে এই দাসদের কাছে সানি লিওন একটি ইতিবাচক চরিত্র।কারণ প্রথম আলো একে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছে।আবার প্রথম আলোর পাঠক ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করবেনা।এর কারণ প্রথম আলোর এজেন্ডা হচ্ছে ভারতকে বাংলাদেশের 'ধ্রুব'বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে এদেশে উপস্থাপন করে ভারত বিরোধীতা শূন্যের কোটায় কমিয়ে আনা।
৭।
এই হচ্ছে সংবাদ ও এর প্রভাব সম্পর্কিত কিছু কথা।অতএব কোন সংবাদ অন্ধভাবে বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকুন।বিকল্প সংবাদমাধ্যম খুঁজুন।সংশ্লিষ্ট সংবাদটি বিপরীত মতের একাধিক সংবাদমাধ্যমে পড়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিন কোনটি বেশি বস্তুনিষ্ঠ।সেটিই আপনাকে সংবাদকেন্দ্রিক দাসত্ত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবে।সংবাদ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ অস্ত্র।এই অস্ত্র ধীরে ধীরে আপনাকে চেতনাহীন করে ফেলবে।সংবাদের ব্যাপারে সতর্ক থেকে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থাকুন।

0 Comments